সোয়া ১০টার আগেই চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালট শেষ!
সকাল সোয়া ১০টা। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মুলিবাড়ী ভোটকেন্দ্র। ৩০ বছরের এক যুবক ব্যালট পেপার নিয়ে নৌকা সমর্থকদের না দেখিয়ে সিল মেরেছে। তাই বাক্সে ফেলার আগে ব্যালট দেখাতে হবে। যুবকটি ব্যালট না দেখানোয় তার কপালে জুটল চড়-থাপড়।
একই কেন্দ্রের ২ নম্বর বুথে গিয়ে দেখা যায়, পোলিং কর্মকর্তা শুধু সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদের ব্যালট নিয়ে ভোটারের অপেক্ষায় বসে রয়েছে। চেয়ারম্যানের ব্যালট পেপার কোথায় জিজ্ঞেস করতেই বলেন, ‘ওটা আগেই সিল মেরে বাক্সে ভরা হয়েছে।’
১১টার দিকে সয়দাবাদ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, নৌকার এজেন্টরা ভোটারদের দিয়েই প্রকাশ্যে চেয়ারম্যান পদের ব্যালটে সিল দিয়ে নিচ্ছেন। বিএনপির প্রার্থী প্রতিবেদকের সামনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন।
উত্তরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা বললেন, ‘আমি নিষেধ করেছি কিন্তু কেউ কথা শোনে না।’
পঞ্চসারটিয়া কেন্দ্রে দেখা যায়, ১ নম্বর বুথের নৌকার এজেন্ট প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। সিল মারার বিষয়ে বলেন, ‘ভোটার সঠিকভাবে ভোট দিতে পারছে না, তাই সিলটি মেরে দিয়েছি।’
দুপুর আড়াইটায় কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউপির কামারখন্দ সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ব্যালট পেপারে মুড়িতে হাতে লেখা ভোটারের নম্বর নেই। পোলিং কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘সব সিল মেরে নিয়েছে। আমরা কীভাবে নম্বর দেব?’
একই কেন্দ্রের ১ নম্বর বুথে দেখা যায়, ১৪-১৫ বছর বয়সী কিশোরদের ভোটের লাইন। কিশোররা যাচ্ছে। ব্যালট পেপার নিয়েই সিল মেরে বাক্স ভরছে।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুস ছামাদ বললেন, ‘কিছু অনিয়ম হচ্ছে। আমি নিষেধ করেছি, কিন্তু কেউ মানেনি।’
একই চিত্র ভদ্রঘাট ইউনিয়নের কুটিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। তবে এসব কেন্দ্রে বিএনপিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোনো এজেন্ট ছিল না।
এ ছাড়া তাড়াশের সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল ভোটকেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা প্রকাশ্যে সিল মেরে নিয়েছে।
প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রে শুরু হয়েছিল ভোট কারচুপি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।