‘আইএস হত্যা করবে এমন কারণ খুঁজে পাই না’

‘ইসলামিক স্টেট (আইএস) কেন অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যা করতে পারে? এর কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাই না।’ তিনি আরো জানান, অধ্যাপক সিদ্দিকী ব্লগার ছিলেন না। ব্লগিং করার জন্য যে কম্পিউটারজ্ঞান থাকা দরকার, সেটা তাঁর ছিল না।
আজ রোববার দুপুরে ইংরেজি বিভাগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংবাদিকদের এ কথা বলেন বিভাগের সভাপতি ড. এ এফ এম মাসউদ আখতার। নিহত রেজাউল করিম এ বিভাগেরই শিক্ষক ছিলেন।
এ এফ এম মাসউদ আখতার বলেন, ‘অধ্যাপক সিদ্দিকী ব্লগার ছিলেন না। কারণ তিনি যে ধরনের লেখালেখি করতেন তাতে কোনো ধর্মকে হেয় করার মতো বিষয় ছিল না। আর ব্লগিং করতে যে ধরনের কম্পিউটারজ্ঞান দরকার, হয় তা অধ্যাপক সিদ্দিকীর ছিল না। তাই আইএসের এ দায় স্বীকারের সঙ্গে বিষয়টি আমরা মেলাতে পারছি না। আইএস তাকে হত্যা করতে পারে এর কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাই না।’
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকারীদের বিচার ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের’ মাধ্যমে সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন বিভাগের শিক্ষকরা।
বিভাগের সভাপতি ড. এ এফ এম মাসউদ আখতার বলেন, ‘এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রোববার থেকে তিনদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন এবং সপ্তাহব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে ইংরেজি বিভাগ। এ ছাড়া অধ্যাপক সিদ্দিকী স্মরণে আজ সোমবার বিভাগে শোকসভা অনুষ্ঠিত হবে।’
ড. এ এফ এম মাসউদ আখতার আরো বলেন, ‘অধ্যাপক সিদ্দিকী কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারী ছিলেন না। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর বিচরণ ছিল। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আর এ ক্ষেত্রে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল্লাহ, অধ্যাপক শেহনাজ ইয়াসমীন, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. জহুরুল ইসলাম, মো. শহীদুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলন থেকে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অধ্যাপক রেজাউল সিদ্দিকীর হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কমর্সূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল সোমবার রাজশাহীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট পালন করা হবে। এ ছাড়া বেলা ১১টায় মুখে কালো কাপড় বেঁধে নগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করবে।
শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে আছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের চিহ্নিত করা, প্রতি ২৪ ঘণ্টা পরপর মামলার তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে গণমাধ্যমের সাহায্যে অবহিত করা, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যেকোনো ধারালো অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয় ও বহনের ক্ষেত্রে নজরদারি জোরদার করা এবং অধ্যাপক সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা বন্ধ করা।
ছবি ক্যাপশন : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইংরেজি বিভাগ। ছবি : এনটিভি