মাহমুদুর রহমানের মাকে দেখা করতে দিল না পুলিশ
রাজধানীর মিন্টো রোডে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে গিয়েও রিমান্ডে থাকা দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের দেখা পেলেন না তাঁর মা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হত্যার ষড়যন্ত্র মামলায় আজ শুক্রবার দুপুরে মাহমুদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি পুলিশ। বিকেল ৫টার দিকে মা মাহমুদা বেগম তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ও সাংবাদিক নেতারা।
পুলিশ তাঁদের মাহমুদুর রহমানের জন্য দেখা করতে দেয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ডিবি কার্যালয়ে গেটে কর্তব্যরত পুলিশ জানায়, আজ দেখা করা সম্ভব নয়। মাহমুদা বেগম বেশ কিছুক্ষণ ডিবি কার্যালয়ের সামনে সবাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এ সময় ডিবি কার্যালয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলে মাহমুদুর রহমান নির্দোষ। তাঁর নামে যে মামলাটি দেওয়া হয়েছে সেটি একটি মিথ্যা মামলা। যে অভিযোগে মামলাটি হয়েছে এর সঙ্গে আমার ছেলে বিন্দুমাত্র জড়িত নয়। তবু তাকে রিমান্ডে আনা হয়েছে। এ জন্য এই বৃদ্ধ বয়সে আমি উদ্বিগ্ন এবং নানা শঙ্কায় ভুগছি। তা ছাড়া আমার ছেলের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার ওজন ১০ কেজি কমে গেছে। তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে আমি চিন্তিত। আমি আশা করি, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তাঁর সঙ্গে যেন কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ করা না হয়।’
মাহমুদা বেগম আরো বলেন, ‘আজ সাত বছর ধরে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। সব মামলায় উচ্চ আদালতে জামিন হলেও আমার ছেলেকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থার অবসান চাই, আমার ছেলের মুক্তি চাই।’
মাহমুদা বেগম ছেলের জন্য আনা কিছু খাবার পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করলে পুলিশ প্রথমে অপারগতা প্রকাশ করে পরে তা গ্রহণ করে। বাদাম, রুটি, কলা ও পানি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী ও ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে তাঁর মাকে সাক্ষাৎ করতে না দেওয়ায় আমরা দুঃখ পেয়েছি। অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।’
অ্যাডভোকেট মাসুদ বলেন, ‘মাহমুদুর রহমানকে ডিবি পুলিশ আজ ১২টায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে এনেছে। সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি মামলায় তাঁকে জড়ানো হয়েছে এবং সেই মামলায় তাঁকে রিমান্ডে আনা হয়। একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিল যে তাঁকে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে আর তার ওপর ভিত্তি করে মামলা দায়ের ও রিমান্ড ইত্যাদির কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতেও অপহরণের এ গল্প খারিজ হয়ে গেছে। মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে এই মামলার কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই। এফআইআরে তাঁর কোনো উল্লেখ নেই, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের আদেশে মাহমুদুর রহমানের কোনো প্রসঙ্গ নেই এমনকি যিনি অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তাঁর কোনো স্ট্যাটাসেও মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। এ ধরনের মিথ্যা মামলায় তাঁকে জড়ানোর জন্য জেলে আটক রাখারও কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া ২০০৬ সালে সরকারি দায়িত্ব ছাড়ার পর এখন পর্যন্ত মাহমুদুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রও যাননি।’
মাসুদ আরো বলেন, ‘মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত সেদিন তাঁর আদেশে উল্লেখ করেছিলেন যে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে যেন সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করা হয়। আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নির্দেশনা অনুসরণ করে মাহমুদুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’
এ সময় আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন মেজবাহ, অ্যাডভোকেট সুলতান মোহাম্মদ, আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইঞ্জিনিয়ার চুন্নুসহ বিপুলসংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।