বগুড়ার মহাস্থানগড়ে বৈশাখী উৎসব শুরু
আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি একসময়ের বাংলার রাজধানী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে শুরু হয়েছে বৈশাখী উৎসব। দেশ-বিদেশের নানা ধর্ম-বর্ণের জটাধারী লাখো বাউল সন্ন্যাসী নারী-পুরুষের আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। ইসলামের পুণ্যভূমি আর বিভিন্ন ধর্মের তীর্থস্থান এই মহাস্থানগড়ে নারী-পুরুষের অবাধ গাঁজা সেবনের পাশাপাশি রাতভর আধ্যাত্মিক নাচ-গানের আসর জমে উঠেছে। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।
আজ থেকে ৮০০ বছর আগে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে হিন্দু রাজা পরশুরামকে পরাজিত করে হজরত শাহ সুলতান বলখী এখানে ইসলামের বিজয় পতাকা উড়িয়ে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন করেছিলেন। বিজয়ের সেই দিনকে স্মরণ করতে শত শত বছর আগে থেকে এখানে ইসলামের বিজয় উৎসব পালিত হতো। কালের পরিক্রমায় এখন সেখানে বিশ্বের বাউল সন্ন্যাসীদের মহামিলনক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে বৈশাখী উৎসব।
যুগ যুগ ধরে বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার এখানে এমন সব লাখো বাউল সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে আসছে। বছরের এই দিনে এখানে হরেক রকম গাঁজাসামগ্রীর মেলাও বসে। পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক তৎপর থাকলেও তেমন সুবিধা করতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় উৎসব। প্রতিবছরের মতো এবারও লক্ষাধিক জিয়ারতকারীর পাশাপাশি জটাধারী পাগলা-পাগলি গঞ্জিকাসেবীদের আগমন ঘটেছে এই পুণ্যভূমিতে। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে মহাস্থান মাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা। রাতভর নাচ-গানের পাশাপাশি মাজার-মসজিদ এলাকায় জিকির, মিলাদ মাহফিল ও নফল নামাজ নিয়েও মগ্ন থাকছেন মুসুল্লিরা।
মেলায় দায়িত্বে থাকা পুলিশের এসআই সামিম আকতার জানান, এবার শেষ বৈশাখীতে মহাস্থানগড় এলাকায় মাদকমুক্ত পরিবেশ এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সার্বক্ষণিক দুজন ম্যাজিস্ট্রেট, বিপুলসংখ্যক পোশাক ও সাদা পোশাকে পুলিশ, র্যাব, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দায়িত্ব পালন করছেন। গাঁজার ধোঁয়ায় পুরো এলাকা অচ্ছন্ন হয়ে পড়লেও পুলিশ প্রশাসন বলছে, মাজার এলাকা সম্পূর্ণ গাঁজামুক্ত রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বৈশাখী উৎসব উপলক্ষে মহাস্থানগড়ের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সহস্রাধিক স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ দোকানি তাঁদের পসরা খুলে বসেছেন। বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। মহাস্থানগড়ের ঐতিহ্যবাহী কটকটি বিক্রি হয়েছে বেশি। আশপাশের গ্রামগুলোতে জামাইদের আগমন ছিল লক্ষণীয়। এ উপলক্ষে মাজারের বিশাল এলাকাজুড়ে মেলা বসে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু এই মেলার উৎসব চলবে শুক্রবার দিনভর।
ইসলামের বিজয় উৎসবের এই দিনকে বিকৃত করে আজ এই পুণ্যভূমিতে মদ-গাঁজা আর নানা ইসলামবিরোধী কাজের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে। প্রশাসন এসব অসামাজিক উৎসব আয়োজন বন্ধ করে এখানে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের প্রচলন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা ধর্মপ্রাণ মানুষের।