ফাতরার বনে ভেঙে পড়েছে হাজারো গাছ
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/05/30/photo-1464575312.jpg)
উপকূলের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষাকারী কুয়াকাটার সাগরঘেঁষা ফাতরার টেংরাগিরি বনাঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে। ঝড়ের তোড়ে হাজার হাজার ম্যানগ্রোভ গাছ ভেঙে পড়েছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে ভেঙে পড়া এসব গাছ ভেসে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বনাঞ্চল দুমড়েমুচড়ে ফেলেছে রোয়ানু। এর ফলে কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সাগরপথে ভ্রমণের অন্যতম পর্যটন স্পট নদী ও সাগরঘেঁষা ‘গৈয়ামতলা পার্ক’টিও এখন সাগরের ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নয় হাজার ৯৭৫ একরের বিশাল ফাতরার টেংরাগিরি বনাঞ্চল কয়েক বছর ধরেই সাগর ও নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছিল। ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর ও ২০০৯ সালের মহাসেনের তাণ্ডবে এ বনাঞ্চল প্রাকৃতিক দেয়াল হয়ে উপকূলের অন্তত ১০ লক্ষাধিক মানুষের সম্পদ ও জীবন রক্ষা করছিল। কিন্তু এবারের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে এ বনাঞ্চলের নদী তীর।
ঘুরে দেখা যায়, কুয়াকাটা সৈকত থেকে চড়পাড়ার নচেতার খাল, ফেউচ্চাখালি খাল মোহনা থেকে বনাঞ্চলের অভ্যন্তরের শত শত গাছ উপড়ে পড়ে আছে। রোয়ানুর তাণ্ডবে গোলবাগান এলাকার এক হাজার গোলগাছ চারা ও সাড়ে ছয় হাজার কেওড়া বাগান নষ্ট হয়ে গেছে বলে বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানালেও বাস্তবে এ ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুণ।
ফেউচ্চাখালির খাল এলাকায় দেখা যায়, কয়েকটি বানর ও নাম না জানা পাখির মৃতদেহ চরে আটকে আছে। ঝড়ের তাণ্ডবের তোড়ে এই প্রাণীগুলো মারা গেছে। এই বনে বানর ছাড়া গুইসাপ, বিরল প্রজাতির পাখি, শূকর, কাঠবিড়ালি, বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পেঁচা, চিল ও বিভিন্ন ধরনের কাঁকড়া দেখা যায়। বনাঞ্চলের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রাণিবৈচিত্র্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এলাকার মানুষ জানান।
ফাতরার বনাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বনাঞ্চলের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছ সবচেয়ে বেশি ভেঙে পছে। নদীর পাশে বাগানের অভ্যন্তরে সাগর ও নদীর জোয়ারের পানি ওঠা-নামা করায় বনের বালুর স্তর ক্ষয়ে গাছের মূল শিকড় বের হয়ে গেছে। এ কারণে ঝড়ের প্রথম আঘাতেই এই গাছগুলো হেলে পড়েছে।
গৈয়ামতলা পার্কে ঘুরতে এসেছে নীলফামারীর ১৫ সদস্যের একদল পর্যটক। এ দলের আবির ও ইতিকা জানান, এ পার্কে বসে সাগর ও বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যেত। কিন্তু এখন সৈকতজুড়েই ভাঙা গাছ। আর বনের মধ্য দিয়ে হেঁটে সাগর পাড়ে যাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরাও বনের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পাখি মরে পড়ে থাকতে দেখেছেন বলে জানালেন।
বড় নিশানবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্প আমতলী রেঞ্জের ফাতরার বনাঞ্চলের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাফর উল্লাহ জানান, বিশাল এ বনাঞ্চলের দু-একদিনেই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা সম্ভব নয়। তাদের হিসাবে কয়েক হাজার গাছ ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া সাগর উত্তাল মৌসুমেও জোয়ারের পানির তোড়ে গাছ ভেঙে যাচ্ছে বলে তিনি জানালেন।