৮০ বছর পর ‘মামাদের রাজ্যে’ ভাগ্নের হানা
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার চালাকচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় ৮০ বছর আগে। তখন থেকে ইউপি চেয়ারম্যানের চেয়ারের পদটি ছিল সেখানকার সরদারবাড়ির দখলে।
মামার বাড়ি থেকে সেই চেয়ার ছিনিয়ে এনে তাতে বসার অধিকার পেয়েছেন এক ভাগ্নে। গত ৪ জুনের নির্বাচনে সরদার বাড়ির সদস্য, তিনবারের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মামা সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল মাস্টারকে পরাজিত করেছেন তাঁরই আপন বড় বোনের ছেলে ভাগ্নে ফখরুল মান্নান মুক্তু। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মুক্তু পাঁচ হাজার ১২৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মামা বুলবুল আনারস প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন চার হাজার ৪৭৯ ভোট।
আর বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আশরাফুল আলম কাদির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৩২০ ভোট। এ ছাড়া নির্বাচনে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাজাহান মিয়া ও হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
এদিকে চালাকচরে ইউপি নির্বাচনের মনোনয়ন জমার দিন থেকে মামা-ভাগ্নের কোন্দল প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভোটযুদ্ধের পর এখন মামা-ভাগ্নের মধ্যে চলছে শুধু বাকযুদ্ধ।
চালাকচরের নির্বাচন নিয়ে গত ২ জুন এনটিভি অনলাইনে ‘‘মামা-ভাগ্নে যেখানে ‘আপদ’ সেখানে’’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
চালাকচরের লোকজন জানান, প্রায় ৮০ বছর আগে চালাকচর ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর প্রথমে সরদারবাড়ির সরদার আছমত আলী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান হিসেবে বহাল থাকেন। স্বাধীতার পর তিনি খুন হন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর আপন ছোট ভাই সরদার মোমতাজ উদ্দিন জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সরদার মোমতাজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর তাঁরই ভাতিজা সরদার আছমত আলীর বড় ছেলে বিএনপি নেতা সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল মাস্টার প্রথমে উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে পরপর তিনবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে অন্য প্রার্থীদের পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল মাস্টার মনোহরদী-বেলাব আসনে বিএনপির মনোনয়নে তিনবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের বড় ভাই।
স্থানীয় লোকজন জানায়, চালাকচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারটি শুরু থেকেই মামাবাড়ি মানে সরদারবাড়ির দখলে ছিল। রাজনীতির উল্টো গতিতে চলা ভাগ্নে চালাকচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফখরুল মান্নান মুক্তু এবার মামার রাজত্বে আপদ হয়ে নেতৃত্ব ছিনিয়ে নেন। মুক্তুর বাবা প্রয়াত আবদুল মান্নান মাস্টার ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
নির্বাচনের ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী মামা সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল মাস্টার ক্ষোভ করে বলেন, ‘আমার কোনো ভাগ্নে নেই। যদি ভাগ্নেই হতো, তাহলে অত্যাচারী, সন্ত্রাসী ও কুখ্যাত বিল্লাল ডাকাতদের নিয়ে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচনে নামত না। প্রকাশ্যে সভায় আমার ঠ্যাং ভেঙে ফেলার হুমকি দিত না এবং আমাকে ও আমার কর্মী-সমর্থকদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দিত না। বিভিন্নভাবে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে আমাকে ভোটে পরাজিত করা হয়েছে। এই দিন দিন না আরো দিন আছে। সেই দিন অচিরেই আসবে যে পালানোর রাস্তাও খুঁজে পাবে না তারা।’
অপরদিকে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও চালাকচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফকরুল মান্নান মুক্তু বলেন, ‘আমি কারো ভাগ্নে-টাগ্নে না। আমি আওয়ামী লীগের কর্মী, জননেত্রী শেখ হাসিনার সৈনিক। বর্তমান চেয়ারম্যান বুলবুল মাস্টার ও তাঁর ভাই লিয়াকত সরদার কোটি কোটি টাকা খরচ করে সন্ত্রাসী ভাড়া করে ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে আমার ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আহত করেছে।’
ফকরুল মান্নান মুক্তু বলেন, ‘এলাকার মানুষের খেদমত করার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটে আমি নির্বাচিত হয়েছি। তাই ইউনিয়নবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের সেবা ও উন্নয়নে সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখব।’