মাদারীপুরে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম
মাদারীপুর জেলা সদর, প্রতিটি উপজেলা শহরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে রমজানের শুরু থেকেই পেঁয়াজ, রসুন, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেট করে একদল অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কয়েকজন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারের পে-স্কেল, রমজান ও বাজেটের প্রভাব ছড়িয়ে পড়লে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিনই পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। প্রশাসনের মনিটরিং না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই সিন্ডিকেট। অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসনের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করেই চলছে এই সিন্ডিকেট।
কোন পণ্যের দাম কত
মাদারীপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চিনি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকা কেজিদরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৫৪ টাকা, দুই সপ্তাহ আগের চিনির দাম ছিল ৫০ টাকা। বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে। অথচ দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ৭৫ টাকায়।
মোটা চালের কেজি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ২৭ টাকা আর দুই সপ্তাহ আগে দাম ছিল ২৫ টাকা। পোলাওয়ের চাল বর্তমানে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল ১০০ টাকা। সরিষার তেলের বর্তমান দর ১১০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ টাকা।
খেসারি ডাল দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে। সেই ডাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি। ২০০ টাকা কেজির গুঁড়ো হলুদ বর্তমানে ২২০ টাকা দরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতীয় মোটা ডাল প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বর্তমানে হয়েছে ১০৫ টাকা। ৩৫০ টাকা দরের জিরা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি। ইসবগুলের ভুসি প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকা। আগে বিক্রি হতো ৭০০ টাকায়। এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৮০০ টাকা প্রতি কেজি। কাঁচামালের দামও বেড়েছে প্রতিটি পণ্যে পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে।
পেঁয়াজের দাম আগে ছিল ২৫ টাকা কেজি। বর্তমানে ৩০-৩৫ টাকা হয়েছে। রসুন আগে ছিল ৭৫ টাকা। বর্তমানে হয়েছে ১০০ টাকা।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সিন্ডিকেট সৃষ্টিকারী কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মজুদ রাখা হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা কিনতে গেলে বাজার সংকটের কথা বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অথচ দাম বেশি দিলেই তারা পণ্য সরবরাহ করছে। সিন্ডিকেটের দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদারীপুর অঞ্চলে চিনি সিন্ডিকেট মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন ক এবং ব অদ্যাক্ষরের দুই ব্যবসায়ী। তাঁদের কাছে চিনি পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সংকটের কথা বলে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেন। এই সিন্ডিকেটের কারণেই মাদারীপুর অঞ্চলে চিনির দাম বেশি। বাজারে সংকটের কথা বললেও তাদের সাত-আটটি গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
মানিক নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নাকি সাধারণ মানুষের পক্ষের সরকার। ব্যবসায়ী ও কৃষক মারা যাচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীর এসে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য মজুদ রাখছে। আমি কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি মনিটরিং করার দাবি করছি।’
পুরান বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইকবাল বলেন, ‘রমজানের জন্য ছোলা, চিনির দাম, বাজেটের জন্য সিগারেটের দাম এবং পে-স্কেলের জন্য অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ছে বলে আমরা মনে করি।’
রিকশাশ্রমিক আবুল বলেন, যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে, তাতে খেটে খাওয়া মানুষের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসনের বক্তব্য
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাদারীপুর পৌরসভার বাজার পরিদর্শক শফিক স্বপন বলেন, শিগগিরই পৌর কর্তৃপক্ষ বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বিষয়টি নিয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিকবার তাঁর অফিসে গেলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া তাঁর ব্যবহৃত সরকারি নম্বরে ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।