মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলক, নাকি ভাগাড়
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/06/17/photo-1466177004.jpg)
বান্দরবানে জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলকটি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ। ফলে দিন দিন এর চেহারা আরো নাজুক হচ্ছে, যা কষ্ট দিচ্ছে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের। তাঁদের দাবি, স্মৃতিফলকটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শহরের বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিফলকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু স্মৃতিফলক প্রাঙ্গণ পুরোটা অরক্ষিত এবং উন্মুক্ত। সামনের বিশাল গর্তে আবর্জনার স্তূপ। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। স্মৃতিফলকের বেদিতে স্থানীয় বাসিন্দারা কাপড়-চোপড় শুকাতে দিয়েছেন। পশ্চিমপাশে কাজ করছেন শ্রমজীবী মানুষ। আরেক প্রান্তে রিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ রফিক, আলমগীরসহ অনেকে বলেন, স্মৃতিফলকের চারপাশ উন্মুক্ত থাকায় লোকজন নানাভাবে স্থানটি ব্যবহার করছে। তাঁদের মতে, এ স্থানে স্মৃতিফলক নির্মাণের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। তাঁরা শুনেছেন, স্মৃতিফলকটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। আর এখানে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হবে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এ মুনিম বলেন, ২০০৮ সালে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে স্মৃতিফলকটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পে সীমানাপ্রাচীর ছিল না। এটি নির্মাণের পর পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে স্মৃতিফলকটি অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকায় ক্ষোভ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আবুল কাশেম বলেন, প্রায় সাড়ে ১৯ শতক জমির ওপরে স্মৃতিফলকটি নির্মাণের পর কোনো কর্তৃপক্ষই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিচ্ছে না। সীমানা দেয়াল না থাকায় যার যখন ইচ্ছা ঢুকে পড়ছে। এ কারণে স্মৃতিফলকটি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে, সেখানে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
একই কথা বলেন বান্দরবান সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, এই স্থানে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করলে মুক্তিযোদ্ধাদের আয়ের একটি পথ তৈরি হবে।
বান্দরবান পৌরসভার সচিব তৌহিদুল ইসলাম বলেন, স্মৃতিফলকটি পৌরসভায় হলেও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। তারপরও জাতীয় দিবসে পৌরসভার পক্ষ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে এলাকাবাসী স্মৃতিফলকটি আবারও আবর্জনার স্তূপে পরিণত করে ফেলে।
এ ব্যাপারে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা উচিমং মারমা জানান, স্থানীয় মানুষ সচেতন না হওয়ায় স্মৃতিফলকটি রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য স্মৃতিফলকটি সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে অন্য কোথাও স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হবে।