সান্তাহারে ভিজিএফের ৫৫ বস্তা চাল আটক
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভায় ভিজিএফের ৫৫ বস্তা (প্রায় আড়াই মেট্রিক টন) চাল আটক করে গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিতরণ তালিকা জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। ওজনে কম দিয়ে অবৈধভাবে ওই চাল মজুদ করা হয়েছিল বলে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
সরজমিনে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সান্তাহার পৌরসভার তিন হাজার ১৮০ সুবিধাভোগী দুস্থদের মধ্যে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বরাদ্দ করা ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়। চাল বিতরণ করার সময়ই পাঁচটি ভ্যানে করে ২৫-৩০ বস্তা চাল পাচার করা হয়। এ সময় পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাজিমউদ্দিন খান বাচ্চু বাধা দেন। কিন্তু পৌরসভার কর বিভাগের কর্মচারী আওয়ামী লীগ নেতা বিকাশ চন্দ্রের হস্তক্ষেপে চাল পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হন। ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র জার্জিস আলম রতনসহ একাধিক কাউন্সিলর এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাসেম এই তথ্য জানিয়েছেন।
কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, সরকার জনপ্রতি ২০ কেজি করে ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দিলেও বিতরণের সময় ১০ কেজি করে চাল কম দেওয়া হয়। এ ছাড়া একজনের কার্ডের চাল ভাগ করে দুজনকে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে চাল বিতরণের সময় ওজনযন্ত্র হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বা ডিজিটাল স্কেল কোনোটাই ব্যবহার না করে ‘বালতি মাপ’ দেওয়া হয়। তালিকাভুক্ত সব সুবিধাভোগীকে চাল দেওয়ার পরও তালিকার বাইরে ৫০-৬০ জন দুঃস্থ এবং মাস্টাররোলে কর্মরত ১১৫ পৌর কর্মীকেও চাল দেওয়া হয়। এরপরও উদ্বৃত্ত থেকে যায় ৫৫ বস্তা চাল। ঘটনাটি রহস্যজনক। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কাসেম সোমবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিলে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়।
ইউএনও রেজাউল করিম লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। উপজেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আবু হেলাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় সান্তাহার পৌরসভায় আসেন। তিনি অভিযোগকারী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মেয়র তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টুর কাছ থেকে ভিজিএফ বিতরণ তালিকা বা মাস্টাররোল জব্দ করেন। এ সময় তালিকাভুক্ত ১১৫ জন সুবিধাভোগী চাল বিতরণের দিন হাজির না থাকার তথ্য মেলে। ১১৫ জন তালিকাভুক্ত ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে চাল বিতরণ করা না হলেও তালিকার বাইরে মাস্টাররোলে সান্তাহার পৌরসভায় কর্মরত ১১৫ পৌর কর্মীকে চাল দেওয়া হয়। সে হিসাবমতে, পৌরসভার গুদামে কোনো চাল অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। তার পরেও পৌরসভার গুদামে পাওয়া গেছে ৫৫ বস্তা (আড়াই মেট্রিক টন) চাল। পরে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করা পৌরসভার ১০৮ নম্বর কক্ষ সিলগালা করেন ত্রাণ কর্মকর্তা আবু হেলাল।
আবু হেলাল জানান, ঈদের ছুটির পর ব্যাপক তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সুবিধাভোগী দুস্থদের কম চাল বিতরণ এবং পাচারের জন্য ৫৫ বস্তা চাল মজুদ করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে সান্তাহার পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’ মেয়র স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের ম্যানেজ করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে ইউএনও রেজাউল করিম জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৫ বস্তা ভিজিএফের চালসহ পৌরসভার গুদাম সিলগালা করে রাখা হয়েছে। বিতরণ তালিকা জব্দ করা হয়েছে। ঈদের পর তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।