ধ্রুবচন্দ্রের পাশে ব্যাচ-৮৭
যেন এক ফালি চাঁদ। আকাশ থেকে নেমে এসেছে রতন-চম্পার অভাবী সংসারে। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে নাম রাখেন ‘ধ্রুবচন্দ্র’। কিন্তু ধ্রুবচন্দ্রের বয়স যত বাড়ে, ততই ধরা পড়ে নানা সমস্যা। হাত-পা বাঁকা হতে থাকে, মুখের ভাষা নেই। আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার মধ্যে নেই। চিকিৎসক, কবিরাজ, ঠাকুর-বৈদ্য ছোটাছুটি করে কোনোই ফল হয়নি। জানা যায়, ধ্রুবচন্দ্র জন্মগতভাবেই শারীরিক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
আজ ১০ বছর ধরে ধ্রুবচন্দ্রকে কোলে-কাঁধে চড়িয়ে বড় করে তুলছেন মা চম্পা রানী। তিনি জানান, আগে ছেলে ছোট ছিল। এখন যতই বড় হচ্ছে, কোলে করে এখানে-সেখানে নেওয়া ততই কষ্টকর হচ্ছে তাঁর জন্য। তাই ছেলের জন্য হুইলচেয়ারটি পেয়ে তিনি খুবই খুশি। কৃতজ্ঞতায় তিনি প্রণাম জানিয়েছেন ‘ব্যাচ-৮৭ আমরা কজন’ সংগঠনের সব সদস্যের প্রতি। ছেলের চলাফেরা এখন অনেকটাই সহজ হবে বলে জানান তিনি।
১৯৮৭ সালে ভৈরবের বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা ব্যাচমেটদের গড়ে তোলা সংগঠন ব্যাচ-৮৭ আমরা কজন আজ শুক্রবার দুপুরে শহরের কমলপুর আমলাপাড়া মহল্লাহর দরিদ্র দিনমজুর রতন সূত্রধর ও চম্পা রানীর শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু সন্তান ধ্রুবচন্দ্রকে (১০) একটি হুইলচেয়ার উপহার দেয়।
দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সাদ বাংলাদেশ কার্যালয় চত্বরে মা চম্পা রানীর কাছে চেয়ারটি হস্তান্তর করেন সংগঠনের অন্যতম সদস্য, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক সায়মন তারিক। এ সময় তিনি বলেন, ‘বন্ধু সাগরের মাধ্যমে খবরটি জেনে আমাদের সংগঠনের সদস্য নাজনীন জাফরসহ কয়েকজন বন্ধু মিলে আমরা ধ্রুবচন্দ্রের জন্য হুইল চেয়ারটির ব্যবস্থা করি। আগামীতে ভৈরবের অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন রকম সেবামূলক কাজ সংগঠনের পক্ষ থেকে করার নীতিগত সিদ্ধান্তও আমরা নিয়েছি।’
এ সময় উপস্থিত ভৈরব উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জলি বদন তৈয়বা বলেন, ‘আমরা যার যার জায়গা থেকে যদি সমাজের অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য কিছু কিছু সেবামূলক কাজ করি, তবে একদিন সমাজ, দেশ বদলে যাবে ইনশাআল্লাহ।’ এ সময় তিনি সমাজের বিত্তবানদের খোলা মনে সমাজসেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
ওই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য বিশিষ্ট অভিনেতা, নাট্যকার ও লেখক সাগর রহমান, ডা. আতাউর রহমান, ডা. মাসুমা খাতুন, ডা. মো. শহীদুল্লাহ প্রমুখ।