মঠের অধ্যক্ষ খুন, ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে শ্রী শ্রী সন্ত গৌড়ীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা ও মঠের সেবায়েত গোপাল চন্দ্র রায়কে (৩৫) গুলি করে আহত করার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
গত ২৮ জুন ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। সেদিনই আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি স্থানান্তর করেন।
অভিযোগপত্রে ১০ আসামির মধ্যে ছয়জনকে পলাতক ও চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
তবে এখনো ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যায় অংশ নেওয়া আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যে পুরো ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে।
মামলার আসামি যাঁরা
দেবীগঞ্জে মঠের অধ্যক্ষকে গলা কেটে হত্যা মামলার আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব ওরফে আন্ধি (২৬), রাজীবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ওরফে বাঁধন (২৫), মো. সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল (২৪), মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসান (২৬), মো. আলমগীর হোসেন (২৪), মো. রমজান আলী (২০), মো. হারেজ আলী (৩৩), আলহাজ খলিলুর রহমান, মো. রানা (২৫) ও মো. শফিউল আলম ওরফে ডন ওরফে সোহান।
এঁদের মধ্যে জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব ওরফে আন্ধি, রাজীবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ওরফে বাঁধন, মো. সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসান, মো. রানা এবং মো. শফিউল আলম ওরফে ডন ওরফে সোহান পলাতক। বাকি চারজন কারাগারে।
এ মামলায় এর আগে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩০), মো. বাবুল ইসলাম (৩২) ও আবদুল মোমিনের (৩০) বিরুদ্ধে অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল পৌনে ৭টার দিকে মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন দুর্বৃত্ত দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরের করতোয়া নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত শ্রীশ্রী সন্ত গৌড়ীয় মঠে এসে মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা ও গোপাল চন্দ্র রায় (৩৫) নামের এক সাধুকে গুলি করে। গুলির শব্দ শুনে অপর পূজারী নির্মল চন্দ্র এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা ককটেল ফাটিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় নিহত যজ্ঞেশ্বরের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ রায় ওই দিনই দেবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আইয়ূব আলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনিই আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সাত পৃষ্ঠায় কম্পিউটার কম্পোজ করা এ অভিযোগপত্রে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগপত্রের বর্ণনা
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে আসামি নজরুল ওরফে হাসান, রাজীবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ও শফিউল ইসলাম ওরফে ডন মোটরসাইকেলে করে মঠে আসে।
নজরুল মোটরসাইকেলে বসে থাকে। রাজীবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ও শফিউল ইসলাম ওরফে ডন মোটরসাইকেল থেকে নেমে মঠের ভেতরে যায়। রাজীবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল যজ্ঞেশ্বর রায়কে চাপাতি দিয়ে কোপ মারে এবং দেহ থেকে মস্তক দ্বিখণ্ডিত করে হত্যা করে। রাজীবুল ইসলাম মোল্লা ওরফে বাদল ও শফিউল ইসলাম ওরফে ডন দুজনেই পিস্তল দিয়ে গুলি করে। ককটেল ফাটিয়ে মোটরসাইকেলে করে আবার চলে যায়।
আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব ওরফে আন্ধিকে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী অর্থ ও অস্ত্র জোগানদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁকে রংপুর বিভাগের জেএমবির কমান্ডার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল অস্ত্র বহনকারী ও হেফাজতকারী। নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসান অস্ত্র বহনকারী, পরিকল্পনাকারী ও বাইকচালক। আলমগীর হোসেন পরিকল্পনাকারী ও অস্ত্র হেফাজতকারী। মো. রমজান আলী সাংগঠনিক কাজ পরিচালনাকারী ও পরিকল্পনাকারী, মো. হারেজ আলী অস্ত্র নিরাপদ হেফাজতকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহযোগী, খলিলুর রহমান জেএমবির সদস্য সহযোগী, মো. রানাকে আসামিদের বাসস্থান দেওয়া ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যায় অংশ নেওয়া তিনজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তবে পুলিশ বলছে, ঘটনাটিকে শনাক্ত (ডিটেক্ট) এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আইয়ূব আলী বলেন, মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা না গেলেও পুরো ঘটনাটিকে খুব কম সময়ের মধ্যে ডিটেক্ট করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ১০ জনের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
পঞ্চগড় জজকোর্টের সরকারি কৌঁসুলি আমিনুর রহমান বলেন, এ মামলার বিচার শুরু করতে একটু সময় লাগবে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা আছে। যেমন পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে। এরপর পলাতক আসামিরা আত্মসমর্পণ না করলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এরপরও আত্মসমর্পণ না করলে তাদের অনুপস্থিতিতে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।
একই ঘটনায় দেবীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মজিবর রহমান অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। এ দুটি মামলার একই তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দেবীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আইয়ূব আলী ওপরের ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।