বিদেশ নয়, চিরঘুমের দেশে রাশেদুল
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/02/04/photo-1423072790.jpg)
কাতারের ফ্লাইট ধরবেন বলে বিএনপির ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার রাশেদুল ইসলাম (২৬) । স্বপ্ন ছিল, পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনবেন, স্ত্রী-সন্তানের মুখে হাসি ফোটাবেন। কিন্তু বিদেশ নয়, রাশেদুল চলে গেছেন চিরঘুমের দেশে।
গত সোমবার রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বাসে চড়েন রাশেদুল। মঙ্গলবার ঢাকায় থেকে বুধবার দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কাতারের ফ্লাইটে উঠার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সোমবার রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে পাল্টে যায় রাশেদের জীবনের সব হিসাব-নিকাশ। বিমানবন্দরের বদলে রাশেদের ঠাঁই হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।
বাসের আগুনে রাশেদুলের শরীরের ৮০ শতাংশই পুড়ে যায়। সেদিন বার্ন ইউনিটে গিয়ে রাশেদুল বলতে শোনা যায়, ‘আপা, আপা, আমার ফ্লাইট বুধবার দুপুরে। আমার পাসপোর্টটা কোথায়?’
আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৫টায় রাশেদুল মারা গেছেন। তাঁর চাচাতো ভাই জসীম উদ্দিন বার্ন ইউনিট থেকে এনটিভি অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এই নিয়ে চৌদ্দগ্রামের বাসে আগুন দেওয়ার ওই ঘটনায় আটজন মারা গেলেন।
জসীম উদ্দিন জানান, রাশেদ চকোরিয়ার বরইতলীর গবিন্দপুরের গ্রামের ছৈয়দ আহমদ মনুর ছেলে। তাঁর দুই ছেলে রাফি (৩) এবং সোহাগ (২), স্ত্রীর নাম ছবি আক্তার। রাশেদুল দিনমজুরি করে পরিবার চালাতেন। সম্প্রতি তিনি জমি বিক্রি ও ধার-দেনা করে চার লাখ টাকা সংগ্রহ করেছিলেন কাতার যাওয়ার জন্য।
রাশেদুলের মৃত্যুর সংবাদে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আত্মীয়স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে আসেন। আজই তাঁকে চকোরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান জসীম উদ্দিন।
রাশেদুলের মতোই কাতার যাওয়ার স্বপ্ন নিভেছে চকোরিয়ার আরো দুজনের। এরা হলেন হারবাং ইউনিয়নের উত্তর হারবাং গাইয়াপাড়ার বাসিন্দা ছিদ্দিক আহমদের ছেলে আবু তাহের (৪০) ও ছালেহ আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইউছুফ (৫০)। দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমায় এই দুজন কৃষক ঘটনাস্থলেই মারা যান। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে তাঁদের লাশ দাফন করা হয়।
চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন বাবর জানান, আবু তাহের এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা। ইউছুফের সংসারে রয়েছে দুই মেয়ে ও তিন ছেলে।
বাসের যাত্রী ছিলেন রাশেদুলের চাচা মোহাম্মদ হানিফ। তিনিও দগ্ধ হয়েছেন, তবে আশঙ্কামুক্ত। মঙ্গলবার বার্ন ইউনিটে মোহাম্মদ হানিফ বলছিলেন, গ্রামের জমি বন্ধক রেখে কাতারে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করেন রাশেদুল। এখন পরিবারের আর কিছুই রাইল না।
সোমবার দিবাগত রাতে আইকন পরিবহনের একটি বাস কক্সবাজার থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল। রাত ৩টার দিকে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার এলাকায় দুর্বৃত্তরা বাসের ভেতর পেট্রলবোমা ছুড়ে মারলে ঘটনাস্থলেই আগুনে পুড়ে সাত যাত্রীর মৃত্যু হয়। দগ্ধ হন নয়জন। বাস থেকে নামতে গিয়ে আহত হন আরো সাতজন। তাঁরা হলেন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মো. ইউসুফ (৫৫) ও আবু তাহের, যশোরের নূরুজ্জামান (৪৫) ও তাঁর মেয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী মাইশা (১৬), নরসিংদীর পলাশ উপজেলার শান্ত ও আসমা আক্তার।