কারাগারে মীর কাসেমের সঙ্গে ছেলের সাক্ষাৎ
মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁর ছেলে ও এক আইনজীবী।
আজ শনিবার দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২-এ প্রায় ৪০ মিনিট ছেলে ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন মীর কাসেম।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট ২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, মীর কাসেম আলী নির্জন সেলে বন্দি রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ছেলে মীর আহমেদ বিন কাসেম ও আইনজীবী সাঈদ মো. রায়হান উদ্দিন আজ সকালে কারাগারে আসেন এবং অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর ১২টায় মীর কাসেম আলীর সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ করার ব্যবস্থা করা হয়। কারাগারের একটি কক্ষে তারা মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দুপুর ১২টা থেকে ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা মামলার বিষয়ে কথা বলেন।
এর আগে ২৬ জুলাই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মীর কাসেমকে কাশিমপুরের কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
গত ১৯ জুন ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন মীর কাসেম আলী। ২৫ জুলাই উচ্চ আদালত রিভিউ আবেদনের শুনানি এক মাস পিছিয়ে ২৪ আগস্ট পুনর্নির্ধারণ করেন। মীর কাসেমের পক্ষে আইনজীবীর দুই মাসের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলের নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ২০১৪ সালের আগে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে দণ্ডপ্রাপ্তির পর তাঁকে ফাঁসির সেলে পাঠানো হয়।
২০১২ সালে গ্রেপ্তারের পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে তাঁর যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দেন। একই বছরের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন এই আলবদর কমান্ডার। চলতি বছরের (২০১৬) ৮ মার্চ দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগও তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন।
১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মীর কাসেম আলীর জন্ম মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে। ডাকনাম পিয়ারু ওরফে মিন্টু। বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে থাকতেন ছোটবেলায়। সেখানে জড়িত হন ইসলামী ছাত্রসংঘের রাজনীতিতে। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ১৯৭৭ সালে নাম বদল করে তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী ছাত্রশিবির হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এ সংগঠন। তিনি হন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরবর্তীতে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীতে। একাত্তরে চট্টগ্রামে অবস্থানের সময় ঘাতক আলবদর বাহিনীর ক্যাম্প ও টর্চার সেল স্থাপন করেন ডালিম হোটেল নামে পরিচিত স্থানীয় মহামায়া হোটেলে। সেখানে নির্যাতন ও হত্যা করা হয় স্বাধীনতার বহু সমর্থককে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ডালিম হোটেল চট্টগ্রামবাসীর কাছে হত্যাপুরী হিসেবে পরিচিতি পায়। নৃশংসতার জন্য মীর কাসেমের পরিচয় হয় ‘বাঙালি খান’। ছাত্রসংঘের বাছাই করা কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর তিনি ছিলেন তৃতীয় কমান্ডার।
নিজামী দলের নেতৃত্ব ও প্রভাব বিবেচনায় ছিল জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের পর জামায়াতের পঞ্চম শীর্ষ নেতা এবং একই সঙ্গে আলবদর বাহিনীর তৃতীয় প্রধান নেতা। আর বিশেষভাবে তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই বাহিনীর প্রধান। স্বাধীনতার পর জামায়াতে ইসলামীকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করতে কাজ করেন তিনি। ১৯৮০ সালে তিনি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর এ-দেশীয় পরিচালক হন। ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন।
ইবনে সিনা ট্রাস্টসহ বহু আর্থিক, বাণিজ্যিক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা পরিচালক মীর কাসেম আলী দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান। বিগত তিন দশকে তিনি জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অর্থের অন্যতম জোগানদাতায় পরিণত হন। অর্থাৎ তাঁর জোগানো অর্থেই জামায়াতে ইসলামী শক্ত ভিত্তি পায়।