মা ও দুই মেয়েকে হত্যার অভিযোগ
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের গৃহবধূ ও তাঁর দুই মেয়েশিশুর মৃত্যুর রহস্য এখনো উদঘাটিত হয়নি। স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গৃহবধূর স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করেছে।
গতকাল বুধবার দুপুরের টিকেট গ্রামের সরদারডাঙ্গি এলাকার কৃষক প্রশান্ত সরকারের স্ত্রী অষ্টমী রানী সরকার (২৪) এবং তাঁর দুই মেয়ে বন্যা (৪) ও পাখির (চার মাস) লাশ নিজেদের পুকুর থেকে উদ্ধার করে। অষ্টমী কালীগঞ্জ উপজেলার কাজলা গ্রামের প্রহল্লাদ সরকারের মেয়ে। তাঁরা চার বোন। অষ্টমী সবার ছোট ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে লাশ তিনটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এরপরই লাশ সৎকার নিয়ে সৃষ্টি হয় জটিলতা।
অষ্টমী রানী সরকারের বোন গঙ্গা রানী জানান, হিন্দুধর্মীয় বিধানমতে বিবাহিত নারীর মরদেহ শ্বশুরবাড়িতেই সৎকার করা হয়ে থাকে। মরদেহ বাবার বাড়িতে নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।
অথচ শ্বশুরবাড়ির লোকজন গ্রেপ্তার ও মামলার আসামি হওয়ায় গ্রামের কোনো লোক তাঁদের সৎকারের দায়িত্ব নিতে সম্মত হননি। এ অবস্থায় বিকেল ৫টা পর্যন্ত লাশ তিনটি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পড়ে ছিল। সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা পৌরসভা ও পুলিশের অনুমতি নিয়ে লাশগুলো শহরের শ্মশানের পাশে খালপাড়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে জানান, ‘বিষয়টির তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।’
ওসি আরো জানান, গঙ্গা রানী সরকার আজ বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। পাঁচ আসামির মধ্যে অষ্টমীর স্বামী প্রশান্ত সরকার, শ্বশুর প্রফুল্ল সরকার ও শাশুড়ি হিমেল সরকারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অপর দুই আসমি প্রশান্তর বোন উপজেলার ফিংড়ি গ্রামের হাজারী সরকার ও তাঁর স্বামী শংকর কুমারকে পুলিশ খুঁজছে।
এদিকে অষ্টমী রানী সরকারের বোন গঙ্গা রানী সরকার এনটিভি অনলাইনকে অভিযোগ করেন, ‘আমার বোন ও তার দুই মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন গলায় ফাঁস লাগিয়ে অথবা বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে। অষ্টমী রানী সরকারের কোনো ছেলেসন্তান না থাকায় শ্বশুর, শাশুড়ি ও স্বামী তাঁর ওপর প্রায়ই নির্যাতন করতেন। তাঁরা অষ্টমীকে সরিয়ে দিয়ে ছেলেসন্তান পাওয়ার আশায় ছেলেকে আবার বিয়ে দেবেন বলেও জানিয়েছিলেন।’
গঙ্গা রানী আরো বলেন, ‘এ কারণেই তাঁরা আমার বোন ও ভাগ্নিদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন।’
আজ সকালে টিকেট গ্রামের সরদারডাঙ্গি এলাকায় গেলে গ্রামের লোকজন এনটিভি অনলাইনকে জানান, প্রশান্তরা তিন বোন ও এক ভাই। তাঁর দুই বোন লক্ষ্মী রানী সরকার ও বালাড়ি রানী সরকার বিয়ের পর স্বামীর বাড়িতে যথাক্রমে বিষ খেয়ে ও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তবে প্রশান্তর পরিবারের সাথে গ্রামের কারো কোনো ঝগড়া ছিল না। এমনকি অষ্টমী রানী সরকার অত্যন্ত সহজ সরল হওয়ায় কারো সাথে তিনি পারিবারিক বা অন্য কোনো বিষয়ে আলোচনা করতেন না।
এলাকাবাসী জানান, বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সবাইকে বাড়িতেই দেখা গেছে। দুপুর ১২টার দিকে নিজেদের পুকুরে প্রথমে শিশু পাখির লাশ ভেসে ওঠে। এরপরই মা ও আরেক মেয়ে বন্যার লাশ উদ্ধার করা হয়।