কনডেম সেলে বসেই রায় শুনেছেন মীর কাসেম আলী
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২-এর কনডেম সেলে বন্দি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজের রায় শুনেছেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট ২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী এ কারাগারের কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন খারিজের রায়ের খবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কনডেম সেলে বসেই তিনি সঙ্গে থাকা রেডিওর মাধ্যমে শুনেছেন। তিনি বর্তমানে কারাগারে স্বাভাবিক ও সুস্থ আছেন। তিনি ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করছেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলের নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে মীর কাসেম আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শুরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। ২০১২ সালে গ্রেপ্তারের পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে তাঁর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকরের রায় দেন। রায় ঘোষণার আগে হাজতবাসকালে তিনি ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে দণ্ডাদেশ পাওয়ার পর তাঁকে ফাঁসির (কনডেম) সেলে পাঠানো হয়।
একই বছরের ৩০ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন এই আলবদর কমান্ডার। চলতি বছরের ৮ মার্চ দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগও তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। গত ১৯ জুন ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন মীর কাসেম আলী।
আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এতে তাঁর আইনি লড়াই শেষ হয়েছে। রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুই পক্ষের আইনজীবীকেও অনুলিপি পাঠানো হবে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ আসামি মীর কাসেমকে রিভিউ খারিজের রায় ও আদেশ পড়ে শুনিয়ে জানতে চাইবে তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না। আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হবে মীর কাসেম আলীর দণ্ডাদেশ কার্যকরের প্রক্রিয়া। তবে এখন নিয়ম অনুযায়ী তিনি কেবল নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। এর নিষ্পত্তি হলেই সরকার দণ্ড কার্যকর করবে। আর প্রাণভিক্ষা না চাইলে যে কোনো সময় তাঁর দণ্ড কার্যকর করা হবে।
১৯৫২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামে মীর কাসেম আলীর জন্ম হয়। ডাকনাম পিয়ারু ওরফে মিন্টু। বাবার চাকরির সুবাদে চট্টগ্রামে থাকতেন ছোটবেলায়। সেখানে জড়িয়ে পড়েন ইসলামী ছাত্রসংঘের রাজনীতিতে। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ১৯৭৭ সালে নাম বদল করে তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী ছাত্রশিবির হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এ সংগঠন। তিনি হন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। পরে যোগ দেন জামায়াতে ইসলামীতে।