রিভিউ খারিজের রায় শোনানো হলো মীর কাসেমকে
রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়ার রায় পড়ে শোনানো হয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাসেম আলীকে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক মীর কাসেমকে এ রায় পড়ে শোনান।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ডেপুটি জেলার লাবলু রহমানের নেতৃত্বে রায়ের কপি কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছানো হয়।
প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাতে কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ডেপুটি জেলার লাবলু রহমানের নেতৃত্বে কড়া পুলিশি পাহারায় রায়ের অনুলিপি কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়। আজ সকালে মীর কাসেমকে রায় পড়ে শোনানো হয়। এ সময় মীর কাসেম স্বাভাবিক ছিলেন।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জেলার মো. নাসির আহমেদ জানান, মীর কাসেম আলী কারাগারের ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্দি আছেন। সেখানেই তাঁকে রায় পড়ে শোনানো হয়।
রায় শোনানোর পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা হিসেবে মীর কাসেম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না—জানতে চাওয়া হয় নাসির আহমেদের কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানাবেন মীর কাসেম।
প্রাণভিক্ষা চাইলে মীর কাসেম কিছুদিন সময় পাবেন। কিন্তু তা না করলে তাঁর ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে, মীর কাসেমের রিভিউ খারিজের পর কাশিমপুর কারাগারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জোরদার করা হয়েছে। তল্লাশি করে বহিরাগতদের ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে মীর কাসেমের রায়ের অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এর আগে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের সহকারী রেজিস্ট্রার মেহেদী হাসান ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যান। এ ছাড়া রায়ের একটি করে অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে মঙ্গলবার সকালে মীর কাসেমের ফাঁসি বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। এর পরপরই বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ২৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। প্রধান বিচারপতি নিজে রায় লেখার পর অন্য বিচারপতিরা এতে একমত পোষণ করে স্বাক্ষর করেন।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। গত ৮ মার্চ আপিলের রায়েও সেই সাজা বহাল থাকে। উচ্চ আদালতে ওই রায়ের রিভিউ আবেদন করলে মঙ্গলবার তাঁর আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
এখন রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন একাত্তরের আলবদর নেতা মীর কাসেম। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বা প্রাণভিক্ষার আর্জিও নাকচ হয়ে গেলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। তার আগে আসামির সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন।
মীর কাসেম ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তারের পর থেকে কাশিমপুর কারাগারেই ছিলেন। ২০১৪ সালের আগে তিনি এ কারাগারে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন।
পরে ২০১৪ সালের নভেম্বরে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হলে তাঁকে ফাঁসির সেলে পাঠানো হয়। তবে এর আগে ওই বছরই ২০ জুন তাঁকে কাশিমপুরের কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল। পরে ২৬ জুলাই আবার তাঁকে কাশিমপুর কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলে নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মীর কাসেমকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর যুদ্ধাপরাধের বিচার।