‘প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত নিতে ছেলেকে চান মীর কাসেম’
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করে শেষ চেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ছেলের সঙ্গে পরামর্শ করতে চান।
মীর কাসেমের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, ২২ দিন আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেমকে ‘তুলে নিয়ে যাওয়া হয়’। ছেলে মীর কাসেমের মামলার আইনজীবীও।
যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, কেউ নিখোঁজ হলে থানায় জিডি করলে পুলিশ তাঁকে খুঁজে বের করবে।
আজ গাজীপুরের কাশিমপুরের কেন্দ্রীয় কারাগারে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার ব্যাপারে তাঁর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন বলেন, ‘মীর কাসেম আলী সাহেবের ব্যাপারে কোনো কথা বলার আগে, কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে আমার ছেলেকে আমরা চাচ্ছি। কারণ, যেহেতু ছেলে আমাদের ল’ইয়ার ছিল। সেহেতু তাঁর সঙ্গে পরামর্শ আমাদের খুব বেশি দরকার। এ জন্য আমরা আমাদের ছেলেকে ফেরত চাচ্ছি সবার আগে। ছেলেকে পেলেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিব ইনশাল্লাহ।’
‘মীর কাসেম আলী সাহেব বলেছেন, যেহেতু আমাদের ছেলে আমার একজন ল’ইয়ার এবং পরিবারেরও একজন সদস্য। এ জন্য পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত জানাব। আমরা অপেক্ষা করছি, ছেলেকে পাওয়া যায় কি না? এর মধ্যে পাওয়া গেলে আমরা সবাই আলাপ-আলোচনা করে এটা জানাব’, যোগ করেন মীর কাসেমের স্ত্রী।
তবে এর মধ্যে যদি প্রাণভিক্ষার আবেদনের সময় শেষ হয়ে যায়- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মীর কাসেমপত্নী বলেন, ‘যদি সময় শেষ হয়ে যায় সেটা ভিন্ন কথা। যতক্ষণ সময় আছে আমি অপেক্ষা করতে চাই।’
গতকাল মঙ্গলবার মীর কাসেমের রিভিউর শুনানির আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। যার মধ্য দিয়ে মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকে এবং শেষ হয়ে যায় আইনি লড়াইয়ের সবগুলো ধাপ। সামনে আছে শুধু প্রাণভিক্ষার আবেদনের সুযোগ।
এরপর রাত ১২টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মীর কাসেম আলীর রিভিউ খারিজ সংক্রান্ত রায়ের কপি গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার ২-তে এসে পৌঁছে দেওয়া হয়। রাত অনেক বেশি হওয়ায় মীর কাসেম আলীকে তা পড়ে শোনানো হয়নি। যদিও এ দিন রেডিওতে রিভিউ খারিজের খবর পান এ জামায়াত নেতা।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের কপি পড়ে শুনানো হয় মীর কাসেমকে। রায় পড়ে শুনানো হলে তাঁকে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছিল। তাঁর চোখে-মুখে উদ্বেগ লক্ষ করা গেছে বলে জানান কারাগারের জেলার মো. নাসির আহমেদ।
এর পরেই দুপুরে মীর কাসেম আলীর সঙ্গে দেখা করেন পরিবারের সদস্যরা। ওঁদের মধ্যে ছিলেন তাঁর স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুন, মেয়ে সুমাইয়া রাবেয়া ও তাহেরা তাসনীম, পুত্রবধূ সাহেদা তাহমিদা ও তাহমিনা আক্তার, ভাতিজা হাসান জামান খানসহ পরিবারের চার শিশু।
দুই ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে মীর কাসেমপত্নী বলেন, ‘এটাই শেষ সাক্ষাৎ না। শেষ কাজগুলো কেমন হবে, কীভাবে করব সে পরামর্শের জন্যই মীর কাসেমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।’
‘নিখোঁজ’ ছেলের সন্ধান দাবি করে খন্দকার আয়েশা খাতুন আরো বলেন, ‘অন্তত বাবার শেষ মুহূর্তে ছেলের কাছে থাকা অত্যন্ত দরকার। যদি ছেলেকে না পাই আমরা মনের সন্তুষ্টি নিয়ে তাঁকে (মীর কাসেম) বিদায় দিতে পারব না। এ জন্য আমাদের এখন একমাত্র ইস্যু ছেলেকে কাছে পাওয়া। মীর কাসেম আলী বলেছেন, তিনি ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন।’
এ সময় মীর কাসেম আলীর স্ত্রী ছোট দুই নাতনিকে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরে বলেন, ‘তারা তাদের বাবার জন্য কান্নাকাটি করছে। তারা তাদের বাবাকে ফেরত চায়। আপনারা আপনাদের অবস্থান থেকে আমার ছেলেকে খুঁজে পেতে সহায়তা করুন।’
৬৩ বছর বয়সী মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফাঁসির কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর ২০১২ সাল থেকে তিনি এ কারাগারে রয়েছেন।
২০১৪ সালের আগে তিনি এ কারাগারে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়ার পর তাঁকে ফাঁসির কনডেম সেলে পাঠানো হয়।