ঈদে শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি নৌপথে ভোগান্তির শঙ্কা
বর্ষায় এক মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অচল ছিল মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে মাদারীপুরের কাওরাকান্দি পর্যন্ত নৌপথ। তীব্র স্রোতের কারণে সৃষ্ট এ অচলাবস্থা কাটতে না কাটতেই এবার নৌপথটিতে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকটে রো রোসহ অনেক ফেরিই চলাচল করছে না। কিছু ফেরি আটকা পড়ছে ডুবোচরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মার উজানে তীব্র ভাঙনের ফলে পলি জমে নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় পরিসরে ড্রেজিং (খনন) শুরু হলেও তা তেমন কাজে আসছে না। ড্রেজিং নিয়ে গাফিলতির অভিযোগের অন্ত নেই। এতে আসন্ন কোরবানির ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরে বৃক্ষমেলায় উপস্থিত হয়েছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। সে সময় সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সবাই আশঙ্কা করছেন, ঈদুল আজহায় নাব্যতা সংকটের কারণে কাওরাকান্দি রুটে ফেরি পারাপারে বিঘ্ন ঘটবে। আমরা কাওরাকান্দি-শিমুলিয়া নৌপথে সুষ্ঠুভাবে ফেরি চলাচলের জন্য আটটি ড্রেজার লাগিয়েছি, যার মধ্যে একটি অনেক বড় ধরনের ড্রেজারও রয়েছে, যা দিয়ে ডেজিং শুরু করা হবে।’
কিন্তু মন্ত্রীর বক্তব্যের পর ড্রেজিংয়ে কাজের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ আছে।
স্বল্প দূরত্ব আর অন্যান্য সুবিধার কারণে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে স্বল্প দূরত্বের শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি নৌপথটি বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু গত এক মাসে শিমুলিয়া অংশে পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিলে অচলাবস্থার শুরু হয়।
একদিকে পানি বেড়ে তীব্র স্রোত, অন্যদিকে স্রোতের তোড়ে তীব্র নদীভাঙনে পলি পড়ে নৌ চ্যানেলে নাব্যতা সংকট শুরু হয়। এর ফলে এক মাস ধরে এক প্রকার ধুঁকে ধুঁকে এ নৌপথে ফেরি চলাচল করেছে।
শিমুলিয়া-কাওরাকান্দি ঘাট সূত্রে জানা যায়, স্রোতের গতিবেগ তীব্র হওয়ার কারণে ফেরি, লঞ্চসহ নৌযানগুলো দেড় থেকে দুই কিলোমিটার উজানে গিয়েও চলতে হিমশিম খাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো ফেরির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইব্লিউটিএ) শক্তিশালী টাগ বোট। এর পর স্রোতের গতিবেগ এক সপ্তাহ ধরে কমলেও পরিস্থিতি আরো বেগতিক হয়ে ওঠে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নাব্যতা সংকট আরো প্রকট রূপ নিচ্ছে। বিশেষ করে এ রুটের লৌহজং টার্নিংয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। এ পয়েন্টে তীব্র ভাঙনে পলি পড়ছে দ্রুত। এতেই সংকট চরম রূপ নিয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এ পয়েন্টের আশপাশে বিআইডব্লিউটিএর ছয়টি ড্রেজারসহ নয়টি ড্রেজার কাজ করছে। কিন্তু তবুও পরিস্থিতি অনুকূলে আনা যাচ্ছে না।
ড্রেজিং নিয়ে অসন্তোষ আছে বিভিন্ন মহলে। এই নৌপথের ট্রলারচালক আজিজ মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘নদীর বালু কাটার জন্য অনেক ড্রেজার বসানো হইছে ঠিকই। কিন্তু কোনো কাজ হইতাছে না। আমরা নদী দিয়ে যাইতে-আইতে দেখি ড্রেজার সব সময় চালু আছে। কিন্তু বালু কাটা হইতাছে না। খালি খালি তেল পোড়ায়।’
এদিকে, নাব্যতা সংকটে ১৭টির ফেরির মধ্যে দিনে চলে ১১টি চলে। আর রাত হলেই তা কমে দাঁড়ায় পাঁচটিতে।
বড় ফেরিগুলো (রো রো) দীর্ঘ সময় ব্যয় করে ঝুঁকি নিয়ে চলছে। এতে একদিকে যেমন ফেরির প্রপেলারসহ যন্ত্রাংশ ক্ষতির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে যানবাহন কম পার হওয়ায় প্রায় ৫০ ভাগ রাজস্ব আদায় কমে গেছে। যানজট নিত্যসঙ্গী হওয়ায় অনেক যানবাহনই এড়িয়ে চলছে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে স্বল্প দূরত্বের এ নৌপথ।
ডাম্ব ফেরি টাপলোর মাস্টার ইনচার্জ জামশেদ আলী বলেন, নদীর লৌহজং টার্নিংয়ে দ্রুতগতিতে পলি পড়ে ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। এতে নৌ চ্যানেল সরু হয়ে পড়ছে। ফেরিগুলো ডুবোচর ঘষে চলায় যন্ত্রাংশে বালু ঢুকে ক্ষতি হচ্ছে। দিনের বেলা কোনোরকম চলতে পারলেও রাতে কোনোভাবেই সরু চ্যানেল দিয়ে চলা যাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার-১৩৯-এর চালক রেজাউল করিম বলেন, ‘নদীতে পানি কম। কিন্তু প্রচণ্ড স্রোত থাকার কারণে আমাদের ড্রেজিং কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে । ফলে সঠিকভাবে বালু সরানো যাচ্ছে না । শক্তিশালী টাগ জাহাজও আমাদের কাছে ভিড়তে পারছে না ।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কাওরাকান্দি ঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম বলেন, ‘নাব্যতা সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আমাদের মেরিন বিভাগ বিআইডব্লিউটির ড্রেজিং বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ড্রেজিং কার্যক্রমও চলছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে। তবে এই অচলাবস্থার কারণে আমাদের রাজস্বে প্রভাব পড়েছে। আগের চেয়ে প্রায় ৫০ ভাগ রাজস্ব কমে গেছে।’