‘শেখ হাসিনার বিচার চাই, আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে’

ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা আহাজারি করছিলেন আর বলছিলেন, ‘আমার স্বামী পিন্টুকে মেরে ফেলা হয়েছে।’
‘হাইকোর্টের আদেশ ছিল হাসপাতালের আশপাশে রাখার জন্য। পিজির ডাক্তাররাও বলেছিল হাসপাতালের আশপাশে রাখার জন্য। বহুবার আইজি প্রিজনকে মেসেজ (বার্তা) দেওয়ার পরেও জোরপূর্বক রাজশাহী তাঁকে মারার জন্যই নিয়ে গেছে,’ বলেন কল্পনা।
urgentPhoto
আজ রোববার দুপুর সোয়া ১২টায় রাজশাহীতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পিন্টু। এ সময় তিনি রাজশাহী কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। খবরটি শুনে পিন্টুর হাজারীবাগের বাড়িতে আহাজারি শুরু হয়।
পিন্টুর মা হোসনে আরা বেগম আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘আমি শেখ হাসিনার বিচার চাই, শেখ হাসিনার বিচার চাই। আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে। আমি শেখ হাসিনার বিচার চাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি তখনই কইছি ওরে মারবার জন্য নিয়া গেছে গা। রাজশাহীতে কেউ নেই আমাদের। তবুও আমি যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছিলাম। আল্লাহ তুমি সহ্য করো না। আমার বুক খালি করছে। আমার ছেলেমেয়ে গুলোরে এতিম করে দিয়া গ্যাছে।’
হোসনে আরা আরো বলেন, ‘বিডিআরের মামলাটা নিজে ঘটায়া আমার পিন্টুর নাম দিয়া নিরপরাধ ছেলেটারে জেলে দিয়া মারল।’
পিন্টুর ভাই নাসিম আহাম্মেদ রিন্টু বলেন, ‘হাইকোর্টের অর্ডার এবং মেডিকেল বোর্ডের অর্ডার ওনার যে শারীরিক অবস্থা, এ অবস্থার কারণে অবশ্যই কোনো স্পেশালাইজড হাসপাতালের অধীনে অথবা আশপাশে তাঁকে রাখতে হবে। পরিষ্কার অর্ডার। কিন্তু ওনারা পরিকল্পিতভাবে তাঁকে রাজশাহী পাঠিয়ে দিয়েছেন। গতকাল জেলার ও ডেপুটি জেলার চিকিৎসককে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন। অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় তাঁকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেয়। চিকিৎসকরা বলেছেন হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।’ তিনি দাবি করেন, পিন্টুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পিন্টুর বোন ফেরদৌসি আহাম্মেদ মিষ্টিও দাবি করেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে পিন্টুকে হত্যা করেছে।
দুপুর থেকেই স্বজনদের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা, কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা ভিড় জমাতে থাকেন পিন্টুর বাড়িতে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানা খবরটি শুনেই পিন্টুর বাড়িতে যান।
পিন্টুর আইনজীবী আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পিন্টুর মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়েছিলাম, জেল কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ আমাদেরকে দেখায়নি। আমরা রিট পিটিশনের কপিও দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছিলাম মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সেই আদেশ রয়েছে। তারপরেও তারা সেটি কর্ণপাত করেনি।’
নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুকে বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন নিম্ন আদালত। এই মামলায় ছয় বছরেরও বেশি সময় তিনি কারাগারে আটক ছিলেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর করা আপিল হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে। গত ২০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে পিন্টুকে রাজশাহী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
১৯৮০ সালে ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্বের যাত্রা শুরু হয় পিন্টুর। শেষ পর্যন্ত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হয়েছিলেন তিনি।