পতিসরে সাজসাজ রব
আঁকাবাঁকা পাকা সড়ক চলে গেছে নিঝুম-নিস্তব্ধ-নিভৃত পল্লীতে। সড়কের দুই ধারে বিশাল মাঠ। মাঠ পেরিয়েই নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়নে পতিসরে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি।
রবীন্দ্র-জন্মজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর পঁচিশে বৈশাখ এই কুঠিবাড়ি প্রাঙ্গণে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ভক্তরা; বসে হাজারো মানুষের মিলনমেলা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, নতুনভাবে রং করা হয়েছে কুঠিবাড়িটি, রঙের ছোঁয়া লেগেছে পুরাতন ও নতুন ডাকবাংলো দুটিতেও। জন্মবার্ষিকী উদযাপনের জন্য দেবেন্দ্র মঞ্চ ও তার প্রাঙ্গণে চলছিল সাজসজ্জার কাজ।
এ আয়োজন উপলক্ষে নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলম এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত ছয় বছরে জাদুঘরের কলেবর বৃদ্ধি, রবীন্দ্র-ভাস্কর্য নির্মাণসহ পতিসরকে ঘিরে নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা হয়েছে।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. এনামুল হক এনটিভি অনলাইনকে জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে পতিসরে। এ আয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উৎসবের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে নওগাঁর আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল লতিফ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী সামনে রেখে পতিসর কুঠিবাড়ি এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে ছয় স্তরবিশিষ্ট বিশেষ নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে।’
রবীন্দ্রমেলায় যাতে কোনো প্রকার জুয়া বা অশ্লীলতা স্থান না পায়, সেদিকে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকবে বলেও জানান তিনি।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম পতিসরে আসেন ১৮৯১ সালের জানুয়ারি মাসে। এর পরে বজরায় চড়ে নাগর নদ পেরিয়ে বহুবার পতিসর কুঠিবাড়িতে এসেছেন। এই পতিসর কুঠিবাড়িতে বসেই কবিগুরু রচনা করেছেন কাব্য নাটিকা, বিদায় অভিশাপ, গোরা ও ঘরে বাহিরে উপন্যাসে অনেকাংশ।
তাঁর পুত্রের নামানুসারে কবি এখানে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘কালীগ্রাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউট’, যা এখন পর্যন্ত এই প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।
পতিসরে রবীন্দ্র জাদুঘরে সংগ্রহশালায় রয়েছে কবির ব্যবহৃত দেয়াল ঘড়ি, লোহার সিন্দুক, খাট, টি-টেবিল, টি-পট, আয়না, নাগর বোটের নোঙর, ট্রাক্টরের ভগ্নাংশ, কবির স্নানের বাথটাব, কবির বিভিন্ন বয়সের ছবি এবং কবির স্বহস্তে লিখিত ছয় পৃষ্ঠার চিঠিসহ নানা সামগ্রী।
দিনব্যাপী কর্মসূচি
প্রতিবছরের মতো এবারও পতিসরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হবে বিশ্বকবির ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী। দিনটি কেন্দ্র করে শুক্রবার স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের উদ্যোগে ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় নেওয়া হয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।
সকাল সাড়ে ৯টায় পতিসর কাছারিবাড়ি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী মো. ইমাজ উদ্দীন প্রামাণিক এমপি এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। পরে দেবেন্দ্র মঞ্চে মা সমাবেশ, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
বিশ্বকবির ১৫৪তম জন্মজয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় সংসদের হুইপ মো. শহীদুজ্জামান সরকার এমপি, মো. আবদুল মালেক এমপি, ছলিম উদ্দিন তরফদার এমপি, সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপিসহ আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার, রবীন্দ্রগবেষক ড. আশরাফুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল ইসলাম, সাংবাদিক আবেদ খান, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আবুল হায়াত প্রমুখ।
আলোচনা সভার পর অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে থাকবে রবীন্দ্রসংগীত, আবৃত্তি, নৃত্য ও নাটক এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা।