‘এতটুক একটা জিনিস মারি দিলো, আর আগুন ধরি উঠিল্’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/02/07/photo-1423294163.jpg)
তারা সবাই খেটে খাওয়া মানুষ। গাইবান্ধা থেকে পেটের আগুন নেভাতে কাজের উদ্দেশ্যে আসছিলেন ঢাকায়। কিন্তু পেট্রলবোমার আগুনের কাছে হার মেনে এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
গতকাল শুক্রবার রাতে গাইবান্ধা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা নাপু পরিবহনের একটি বাস তুলসীঘাট এলাকায় স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পৌঁছালে পেট্রলবোমা ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে শিশুসহ পাঁচজন মারা যান। দগ্ধ হন অন্তত ৪০ যাত্রী।
আহতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চলন্ত বাসটির ডান দিক থেকে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারা হয়। মুহূর্তেই আগুন ধরে যায় যাত্রীবাহী বাসটিতে।
পেশায় রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম জানালেন, তিনি বসে ছিলেন বাসের ছাদে। আগুন দেখে দ্রুত লাফ দিয়ে পড়েন নিচে। এতে আহত হন তিনি। আমিনুল বলেন, ‘আমরা বাসের ছাদের উপ্রে ছিলাম, পেট্রলবোমা ডান পাশ থেকে ভিতরে মারি দিসে। মারি দেয়ার পরে আগুন জ্বলি উঠচে একবারে। আমি উপর থাকি ঝাপ মারছি...যারা যারা উপর থাকি ঝাপ মারছে তাদের কমর (কোমর) ভাঙ্গি (ভেঙে) গেচে।’
আরেক রিকশাচালক সাজু। বাসের ভেতরেই বসে ছিলেন তিনি। আগুনের ঘটনার বর্ণনা দিলেন এভাবে, ‘ফস করে দেখি একটা মানে হালকা ভাবের আগুন, তারপরে আস্তে আস্তে দেখা যায় আগুনটা বড় হয়ে গেল। তারপরে আমি চেতন পেলাম। মানে....গ্লাস টান দিয়ে (লাফ মেরে) আমি আমার জীবন বাঁচালাম।’
গাইবান্ধার দিনমজুর তারা মিয়া স্ত্রী-ছেলেমেয়েসহ রওনা দিয়েছিলেন ঢাকার উদ্দেশে। তাঁর ছেলে সুজন আজ সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। স্ত্রী সোনাবান ঢাকায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এখন তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তারা মিয়া বলেন, ‘ভাবলাম কাইলকে তো গাড়ি পামু না, আইজকে চলি যাই....এইটা ঘটনা হইলো? মানুষের মতো কাম হলো এইট্যা? তুলসীঘাটা পার হয়্যা এদিক থেকে এতটুক একটা জিনিস মারি দিলো গাড়ির মইদ্যে, গাড়িতে নাগা খালি (লাগা মাত্র), আগুন ধরি উঠিল্। আর মানুষ কোন পাকে (দিকে) যায় কী সমাচার...আগুন চারোপাশে ছড়ায় গেলো।’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এবং প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের ব্যাপারে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
হাসপাতালটির পরিচালক ডা. আব্দুল কাদের খান জানান, পেট্রলবোমায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক ফ্লুইড, অ্যান্টিবায়োটিক অয়েনমেন্টসহ যা প্রয়োজন সবই দেওয়া হচ্ছে।