‘মা আমি দৌড়াইতে পারি না, আমি দৌড়াব’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি)। একটি বিছানার চারদিকে লাগানো হয়েছে রংবেরঙের বেলুন। বিছানায় রাখা হয়েছে নানা ধরনের খেলনা।
এ সবই করা হয়েছে ওই বিছানায় চিকিৎসাধীন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ধর্ষণের শিকার শিশুটির জন্য। যেন এসব খেলনা আর বেলুন পেয়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও নিজের কষ্ট ভুলে থাকতে পারে সে। আর সে জন্য সব ধরনের চেষ্টাই করে যাচ্ছেন ওসিসির কাউন্সেলররা।
শিশুটির সব আবদার এখন তার মাকে ঘিরে। স্বজনরা বলছেন, আজ শনিবার সকালে মায়ের কাছে নতুন বায়না ধরেছে শিশুটি। মাকে বলেছে, ‘মা আমি দৌড়াইতে পারি না, আমি দৌড়াব, আমি হাঁটব।’
ওসিসির সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম জানান, আগের চেয়ে শিশুটির অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। ওসিসির কাউন্সেলররা শিশুটির বিছানার চারপাশে বেলুন সাজিয়ে ও খেলনা দিয়ে শিশুটির মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।
শিশুটির জন্য গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের অধ্যাপক সালমা রউফ জানালেন, আজ শনিবার সকালে তিনি নিজেই শিশুটিকে দেখে এসেছেন। তার অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিশুটির চিকিৎসা চলছে।
তবে এতকিছুর পরেও মা চোখের আড়াল হলেই সে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। মায়ের কাছেই তার যত আবদার। কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর বায়না ধরে সে মায়ের কাছে। কখনো টেলিভিশন দেখার আবদার জানায়, আবার কোনো কিছু খেতে ইচ্ছা করলে সে ইচ্ছার কথাও জানায় মায়ের কাছে।
গত ১৮ অক্টোবর সকালে বাড়ির বাইরে খেলতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় পার্বতীপুরের এই শিশুটি। পরের দিন ভোর ৬টার দিকে বাড়ির পাশের একটি হলুদক্ষেত থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শিশুটিকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। শিশুটির চিকিৎসার জন্য ঢামেক কর্তৃপক্ষ একটি মেডিকেল টিম গঠন করে। চিকিৎসকরা শিশুটির অঙ্গহানির আশঙ্কা করছেন।
ঘটনার দুদিন পর নির্যাতনের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে একই গ্রামের সাইফুল ইসলাম (৪২) ও আফজাল হোসেন কবিরাজকে (৪৮) আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। ২৪ অক্টোবর দিনাজপুর সদরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দান থেকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।