গোলা ভরা ধান, বুক ভরা হতাশা
দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের আড়ত আশুগঞ্জ ধানের বাজারে বৈশাখ মাসের শুরুতেই নতুন ধান আসতে শুরু করেছে। প্রতিদিন নৌকা, ট্রাক ও অন্যান্যভাবে আশুগঞ্জ বাজারে প্রায় ৭০-৮০ হাজার মণ ধান আসছে। কিন্তু ধানের দাম পাচ্ছেন না কৃষক। গোলাভরা ধান এবার ফলেছে সত্যি, কিন্তু কৃষকের পকেট খালি। প্রতি মণ ধান উৎপাদন খরচের চেয়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।
আশুগঞ্জ ধানের বাজারে প্রতিবছর ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষক ধান বিক্রি করতে আসেন। ধান বিক্রি করে, সংসারের নিত্যপণ্য কিনে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন কৃষক। কিন্তু এবার কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ বাজারে ধানের দাম নেই মোটেই। বীজ, শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক, সেচ খরচ দিয়ে প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা।
কিন্তু বাজারে মণপ্রতি ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫২০ টাকায়। তাই কৃষক হতাশ।urgentPhoto
বাজারে ধান বিক্রি করতে আসা এক কৃষক এনটিভির কাছে হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ৫০০ টাকা মণ ধান বিক্রি করে গৃহস্থের পড়তা (লাভ) হবে কী করে, জমি বেচন (বিক্রি) লাগব।
আরেক কৃষক জানালেন, প্রতি মণে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ধান বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়।
আরেক কৃষক বললেন, সার, তেলের দাম কমিয়ে ধানের দাম বাড়িয়ে দিলে কৃষক বাঁচবে।
এদিকে সরকার ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত রাখায় কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন এই ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধান উৎপাদনে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলে মনে করছেন অনেকেই।
আশুগঞ্জ ধান-চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি মো. জহিরুল ইসলাম এনটিভিকে বলেন, ‘সরকার যদি বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে বিশেষ করে ভারত থেকে চাল আমদানি না করত, আমাদের জন্য বিরাট একটা উপকার হতো। বাংলাদেশের জন্য উপকার হতো, যেহেতু বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে।’
আশুগঞ্জ চাতালকল মালিক সমিতির সহসভাপতি হাজি মো. শাহজাহান সিরাজ বলেন, ভারতীয় চাল সস্তার কারণে আজ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত। ব্যবসায়ীরা দেনাগ্রস্ত হয়ে গেছে, আমি সরকারের কাছে অনুরোধ জানাব, যাতে ভারত থেকে চাল আমদানির নীতি বাতিল করে।
কৃষকদের বাঁচাতে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করার জোর দাবি জানিয়েছেন কৃষক এবং ধান চাল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা।