যৌক্তিক দাবির ভিত্তিতে ১০ সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে : ইসি
সংসদ সদস্য বা কোনো বিশেষ ব্যক্তির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নয়, ১০টি সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করা হয়েছে যৌক্তিক দাবির ভিত্তিতে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগলিক অখণ্ডতা এবং স্থানীয় ভোটার-জনসাধারণ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বক্তব্য আমলে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ রোববার (৪ জুন) নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন।
গত ১ জুন পিরোজপুর-১ ও ২, গাজীপুর ২ ও ৫, ফরিদপুর ২ ও ৪, কুমিল্লা ১ ও ২ এবং নোয়াখালী ১ ও ২ আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনে নির্বাচন কমিশন।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী আসন জাতীয় নির্বাচনের আগে সীমানা নির্ধারণের জন্য খসড়া প্রকাশ করতে হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যে তালিকা ছিল সেটাই আমরা খসড়া হিসেবে প্রকাশ করেছিলাম। এই কমিশনের যে চিন্তা-ভাবনা, তা হলো যেহেতু দুটি নির্বাচন মোটামুটি এই সীমানায় হয়েছে এবং ১৮ সালে নির্বাচন হয়েছে, এটাকে যতটা সম্ভব পরিবর্তন না করা। ২০১৪ সালে ৪০টি এবং ২০১৮ সালে ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন করা হয়েছিল। তার আগে আরও বেশি ছিল। এই সমস্ত পরিবর্তন করলে বেশি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। যত পরিবর্তন কম করা যায়, এটা ছিল আমাদের টার্গেট।’
মো. আলমগীর আরও বলেন, ‘আইনে যেহেতু বলা আছে খসড়া প্রকাশ করতে হবে এবং আপত্তি থাকলে তা গ্রহণ করতে হবে, আমরা সেটা করতে বাধ্য। এজন্য খসড়া প্রকাশ করার পর আহ্বান করেছিলাম। এই খসড়া পরিবর্তন করার জন্য ৩৮টি আসনের সীমানায় পরিবর্তনের জন্য ১২৬টি আবেদন পড়ে। আর ৬০টি আবেদন পড়েছিল, যে খসড়াটা ঠিক আছে কোনো রকম পরিবর্তন করার দরকার নাই। কমিশন এরপর শুনানি দিয়েছে। সবার শুনানি, যত কথা ছিল, যত কাগজপত্র, ম্যাপ জমা দিয়েছে; আমরা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যালোচনা করেছি একাধিক বৈঠকে। আমরা চারদিন শুনানি নিয়েছিলাম।’
মো. আলমগীর বলেন, সবকিছু দেখে যেটা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, সেটা হলো—সংশ্লিষ্ট এলাকার ভেটাররা কী মনে করেন, আমরা কোনো স্থানীয় নির্বাচনে কে আসবেন, কে আসবেন না, কে হয়েছেন, কে হয়নি, সেটা দেখার বিষয় না; আমাদের দেখার বিষয় হলো আগামী নির্বাচনে কে নমিনেশন পাবেন কোন দল থেকে সেটা তো আমরা জানি না। অতএব, তাদের বক্তব্য যতটা না গুরুত্বপূর্ণ তার বেশি গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকার ভোটার কী বলেন। ভোটারদের সবাইকে তো আর ডাকা যায় না। যারা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থাকেন বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, মেম্বার, কাউন্সিলর; এবং উপজেলার যারা চেয়ারম্যান ছিল, তারা যে বক্তব্য রেখেছেন সেগুলো এবং বর্তমানে এমপি মহোদয় আছেন তাদের বক্তব্য আমরা শুনেছি। দেখা গেছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো এমপি মহোদয় এরকম বলছেন, আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অন্য রকম বলছেন। আমরা দু'টো ধৈর্য সহকারে শুনেছি এবং পর্যালোচনা করেছি।’
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের আইনে আছে যে, ভৌগলিক অখণ্ডতা এবং প্রশাসনিক সুবিধা আগে দেখতে হবে। এরপর জনসংখ্যা যতটুকু সম্ভব আমলে নিতে হবে। জনসংখ্যাকে আগেও প্রাধান্য দেওয়া সম্ভব হয়নি, এখনও হয়নি। কেননা, জনসংখ্যা যদি আমরা আমলে নিতে যাই তাহলে অনেক জেলায় আসন আরও কমে যাবে। কোনো জেলায় একটা আসন হয়ে যাবে। আমরা এটা করি না। সেই ভিত্তিতে আমরা পাঁচটা আসনে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই পাঁচটা আসনের কারণে বাকি পাঁচটাতে পরিবর্তন এসেছে।’
মো. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়ন ভিত্তিক ভৌগলিক অখণ্ডতা আছে, তবে উপজেলা ভিত্তিক নাই অনেকগুলো আসনে। এখন এই ধরণের অখণ্ডতা করতে যাই তাহলে বিশাল...২০০ এর মতো আসনে প্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। আর ইউনিয়ন ভিত্তিক দেখি তাহলে আমাদের খুব একটা পরিবর্তন আনার দরকার হয় না। তবে আমরা যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি সেটা হলো স্থানীয় সরকারে প্রতিনিধি এবং গণমান্য ব্যক্তি যারা আছে তারা যে আবেদনগুলো করেছেন। কারণ কে এমপি পদে দাঁড়াবেন, কে দাঁড়াবেন না সেটা তো আমরা জানিনা। কাজেই ভিত্তিতে তো আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। জনসংখ্যার বন্টনটা বোঝায়। এটা করতে গেলে ঢাকায় একটা ওয়ার্ড আছে, যেটাকে আসন করতে হয়। এটাতো করা কঠিন। বর্তমান জনসংখ্যা অনুযায়ী পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার করে ধরি ঢাকায় ১০টা, গাজীপুরে ৫টা আসন বাড়বে। সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতেও বাড়বে। এগুলো তো সিটিতে চলে আসছে।’
মো. আলমগীর আরও বলেন, ‘আমরা প্রাধান্য দিয়েছি প্রশাসনিক অখণ্ডতা এবং ভৌগলিক সুবিধা এবং স্থানীয় পর্যায়ে যারা জনপ্রতিনিধি আছেন তাদের বক্তব্য আমলে নিয়েছি। ১২৬টি আবেদনের মধ্যে ৮৪টি কুমিল্লা থেকে এসেছে। সিরাজগঞ্জ থেকে অনেক পড়েছে। এই হিসেবে অনেক মনে হয়েছে। বেশ কিছু আবেদন ছিল, আসন সংখ্যা বাড়ানো, সে ক্ষমতা তো ইসির নেই। প্রত্যেকটা আসনে কে পক্ষে কে বিপক্ষে বলে সব রেকর্ড করেছি। একেবারে আদালতের রায়ের মতো করে।’