ইসির মতামতেই আরপিও সংশোধন, বেড়েছে ক্ষমতা : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আমাদের প্রস্তাবে কোনো পরিবর্তন করেনি সরকার ও জাতীয় সংসদ। আজ সোমবার (১০ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে আরপিওর সংশোধনী নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘ভোট শেষে অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট কিছু কেন্দ্রে ভোট বাতিল ও গেজেট প্রকাশ আটকে দেওয়ার ক্ষমতা পেয়েছে নির্বাচন কমিশন।’
সিইসি বলেন, ‘আরপিওতে যেসব প্রস্তাব করা যায় তা ১১ মাস আগে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বেশ চড়াই-উৎরাই পার হয়ে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। তাতে সামান্য পরিবর্তনও করেননি। ইসির মতামত নিয়েছে, বিশেষ করে ৯১(এএ) নিয়ে আমরা বলেছিলাম (অনিয়মের কারণে) যেকোনো পোলিং সেন্টার বা পুরো নির্বাচনী এলাকা (বাতিলের) বিধান। আমাদের মতামত চেয়েছে, যেখানে প্রভাবিত হবে, যে কেন্দ্রগুলোতে বাধাগ্রস্ত হবে সে কেন্দ্রগুলো বাতিল করে দেওয়া হোক। আমরা সম্মত হয়েছি, এটা যৌক্তিক। এটি সম্পূর্ণ নতুন দফা।’ আরপিওর ৯১(এ)-তে কমিশন কোনো পরিবর্তন প্রস্তাব করেনি এবং পরিবর্তন করাও হয়নি বলে উল্লেখ করেন সিইসি।
সিইসি আরও বলেন, ‘সরকার বা সংসদ থেকেও এখানে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সেদিক থেকে তা বিল আকারে পাস হয়, এটি আইন আকারে গেজেট হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক মাসে আইনটি নিয়ে নানা বক্তব্য এসেছে। তাতে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। যেসব ব্যাখ্যা, মন্তব্য এসেছে তার সবগুলো সঠিক নয়। এজন্য ইসির পক্ষ থেকে আমরা স্পষ্ট করতে চাই।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কমিশন বুঝে না বুঝে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মেরেছে–এমন মন্তব্য এসেছে। গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল, ৯১(এ) দফায় সংশোধন হয়েছে বলে কথা এসেছে। সরকার নিজের সুবিধার জন্য আইন সংশোধন করেছে। এগুলো নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন। সরকার আরপিও সংশোধন আমাদের প্রস্তাব মতো করেছে। ইসি তার অবস্থানকে আরও সংহত, শক্তিশালী করার জন্যে সংশোধনগুলো চেয়েছিল, সরকার সম্মত হয়েছে। সংসদ সম্মত হয়েছে। এতে করে আমাদের ক্ষমতা বর্ধিত হয়েছে। আসলে তা হয়নি, কোনো পরিবর্তন আসেনি। ৯১ (এএ) নতুনধারা সংযোজিত হয়েছে। ৯১ (এ) ধারায় কোনো পরিবর্তন হতো, তাহলে আমাদের ক্ষমতা হেরফের হতো। সেখানে কিছু করা হয়নি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধারা, যেখানে পোলিং পিরিয়ডে যেকোনো একটি, দুটি কেন্দ্র বা সমস্ত কন্সটিটিউয়েন্সি আমরা বাতিল করে দিতে পারব। সে ক্ষমতা হুবহু আগের মতো রয়েছে।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা নতুন দফা সংযোজন করে বলতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তার ফল সরকারিভাবে আমাদের কাছে পাঠানোর পরে ইসির গেজেট করা ছাড়া আর কোনো কাজ থাকে না। সেখানে আমরা বলেছিলাম—কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু তারপরও কোনো কেন্দ্র বা কোনো কন্সটিটিউয়েন্সি নিয়ে বড় ধরনের অভিযোগ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কমিশন বিষয়টি তদন্ত করে করতে পারবে গেজেট উইথহেল্ড করে রেখে। সেখানে সংসদ বলেছে—আমরা গেজেট উইথহেল্ড করতে পারব, সেক্ষেত্রে কন্সটিটিউয়েন্সির নির্বাচনটা বাতিল না করে যে কেন্দ্রে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয়েছে মনে করবে সেসব কেন্দ্রে ফল বাতিল করতে পারবে। এটাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা আমরা সঠিক মনে করি না। অপব্যাখ্যা দুঃখজনক, নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার জন্য কাজ করব, এটা অবান্তর মন্তব্য।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘সরকার আমাদের সম্মান করেছে। যে সংশোধন চেয়েছিলাম তাতে সম্মত নাও হতে পারতেন। আমরা যেসব প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তাতে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। আমাদের প্রস্তাব পাস হয়েছে। কমিশনের থেকে ইসির ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, এটাও অবান্তর কথা। ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব পাঠাতে পারে না ইসি। জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হন, তাই আমাদের অবস্থানটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা তিনটি জায়গায় ‘ইলেকশন’ শব্দটাকে ‘পোলিং’ শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করেছি। এটা হচ্ছে ক্লারিক্যাল কারেকশন। কারেকশন আর এমেন্ডমেন্ডের মধ্যে ফারাক রয়েছে। এমেন্ডমেন্ডের মধ্যে নীতিগত এলিমেন্ট থাকে, কারেকশনটা হচ্ছে জাস্ট সংশোধন। এটাকে নিয়ে অপব্যাখ্যা করাটা দুঃখজনক মনে করি। আমরা পুরো জাতি একটা সুন্দর নির্বাচন চাই। নির্বাচন নিয়ে অহেতুক, বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে ইসিকে হেয় করা বাঞ্ছনীয় নয়। কমিশনকে গঠনমূলক সাজেশন্স দিয়ে সহায়তা করলে আমরা উপকৃত হব। আমরা সবার কাছ থেকে প্রত্যাশা করি, সুন্দর নির্বাচনের জন্য ভালো সংশোধনের দরকার হলে আমরা করব।’
হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘৯১(এএ) ছাড়াও আরপিওতে আরও কিছু সংশোধনী এনে ইসির ক্ষমতাকে সুসংহত করা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী, পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিয়ে অপরাধ বিবেচনায় শাস্তির বিধান যোগ হয়েছে। ভোটে বাধা দিলে, ভোটারকে কেন্দ্রে আসার পথে বাধা দিলে, মনোনয়নপত্র জমায় বাধা ও প্রত্যাহারে চাপ দিলে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি তার ক্ষমতাও বাড়ানো হয়েছে। ভোটের দায়িত্বে থাকা এ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের সহায়তা না পেলে কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দিতে পারবে। অনিয়মের কারণে ব্যবস্থা না নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। ব্যালট পেপারের পেছনে সিল করার পাশাপাশি স্বাক্ষরের বিধানও রাখা হয়েছে। কারচুপি রোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটা নতুন দফা যুক্ত হয়েছে। প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা ইসির রয়েছে। এখন নতুন বিধান হয়েছে—কারও প্রার্থিতা বাতিল হলে ওই প্রার্থী আবার সেই নির্বাচনে সেখানে নতুন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে না। বিভ্রান্তিতে থাকলে জনগণ অজ্ঞ থেকে যাবেন। আশা করি, সবাই সঠিকভাবে মতামত ব্যক্ত করতে পারে।’