মৌলভীবাজারে তিন জঙ্গি আস্তানার সন্ধান, বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি টিলায় তিনটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া গেছে এবং বিপুল গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে মো. আসাদুজ্জামান জানান, ‘জঙ্গিদের নিয়ে অভিযানের সময় তিনটি পাহাড়ি আস্তানা থেকে ৯৫টি ডেটোনেটর, পাঁচ কেজি বিস্ফোরক, ১৪টি পিস্তলের গুলি, রামদা ও নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। সোমবার রাতে জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ অভিযান পরিচালনা করা হয় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়।’
সিটিটিসি প্রধান বলেন, ‘জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলী গ্রামে আরও জঙ্গি আস্তানা রয়েছে, এমন সন্দেহে অভিযানে নামে সিটিটিসি। আটক সবাঁই নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’র সদস্য। আপাতত পাহাড়ী এলাকায় অভিযান সমাপ্ত হয়েছে। তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদেরও প্রয়োজন। জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য বের হলে আবার ওই এলাকায় অভিযান চালানো হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান, কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার সফিক, মৌলভীবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুদর্শন কুমার রায়, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস ছালেকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এর আগে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৭টার দিকে আটক ১৭ জঙ্গির মধ্যে তিনজনকে নিয়ে ওই এলাকায় অভিযানে যায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। অভিযানে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা করে।
কর্মধা ইউনিয়ন কার্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে ১০টি সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে আটক ১৭ জঙ্গির মধ্যে তিনজনকে নিয়ে অভিযানে নামে সিটিটিসি। তারা প্রথমে কালাপাহাড়সহ কয়েকটি পাহাড়ি এলাকায় এ অভিযান চালান। অভিযান দুপুর ২টার দিকে শেষ হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালে স্থানীয় জনতার হাতে আটক একজনসহ ১৭ জঙ্গিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার হয়।
আটক জঙ্গিরা হলেন—জুয়েল মাহমুদ (২৮), গ্রাম-গাঁওপাড়া, থানা-বাগাতি পাড়া, জেলা-নাটোর। সোহেল তানভীর রানা (৩০), গ্রাম-পুরাবাড়ি, থানা ও জেলা-সিরাজগঞ্জ। সাদমান আরেফিন ফাহিম (২১), গ্রাম-দক্ষিণ শ্রীকুল, থানা-রামু, জেলা-কক্সবাজার, মো. ইমতেজার হাসসাত নাবীব (১৯), গ্রাম-মধ্যম মংনোয়া, থানা-রামু, জেলা-কক্সবাজার। ফাহিম খান (১৭), গ্রাম-মোল্লাপাড়া, থানা ও জেলা-যশোর। মো. মামুন ইসলাম (১৯), গ্রাম-আতাইকোলা, থানা-আতাইকুলা, জেলা-পাবনা। রাহাত মণ্ডল (২৪), গ্রাম-চাঁদপাড়া, থানা-গোবিন্দবক্স, জেলা-গাইবান্ধা। সোলাইমান মিয়া (২১), গ্রাম-পূর্ব দত্তেরচর, থানা-বকশিগঞ্জ, জেলা-জামালপুর। আরিফুল ইসলাম (৩৪), গ্রাম-গোলা কান্দাইল, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়নগঞ্জ। মো. আশিকুল ইসলাম (২৯), গ্রাম-হাটশিপুর, থানা-সারিয়াকান্দি, জেলা-বগুড়া। মামুন ইসলাম (২৬), গ্রাম-আতাইকুলা, থানা ও জেলা-পাবনা। তানভীর রানা (২৪), গ্রাম-ছয়াইল, থানা ও জেলা-ঝিনাইদহ। জুয়েল শেখ (২৫), গ্রাম-দক্ষিন নলতা, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা। রফিকুল ইসলাম (৩৮), গ্রাম-কয়জুড়ি শ্রীপুর, থানা-আতাইকুলা, জেলা-পাবনা। মো. আবির হোসেন (২০), গ্রাম-দারামোদহা, থানা-সাথিয়া, জেলা-পাবনা। মেহেদী হাসান মুন্না (২৩), গ্রাম-পূর্ব চিয়াইপাড়া, থানা ও জেলা-মাদারিপুর। কোয়েল (২৫), গ্রাম-মুমিনপুর, থানা-ধনবাড়ী, জেলা-টাঙ্গাইল।
এর আগে শুক্রবার (১১ আগস্ট) জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলী গ্রামের পাহাড়ি টিলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি বিকেল থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, সোয়াট ও পুলিশ সদস্যরা ঘিরে রাখেন। শনিবার সকালে টাট্টিউলী ওই বাড়িতে ‘অপারেশন হিলসাইড’ পরিচালনা করে সিটিটিসি। ওই অভিযানে কোনো হতাহত ছাড়াই ১০ জঙ্গিকে আটক করা হয়।
এসময় তিন শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে আড়াই কেজি বিস্ফোরক, ৫০ ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জিহাদি বই, কমান্ডো বুটসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদি, ছুরি-রামদাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র এবং নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।