হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগে সাঈদীর ছেলেসহ পাঁচ হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা
মানবতাবিরোধী অপরাধী মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে নেওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহবাগ মোড়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মৃতের ছেলেসহ জামায়াত-শিবিরের পাঁচ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে শাহবাগ থানায় করা এ মামলায় সরকারি কাজে বাধা, মারধর, গাড়িতে আগুন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ এ তথ্য জানান।
ওসি জানান, মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন– মাওলানা সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সফিকুল ইসলাম মাসুদ এবং ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাইফুল ইসলাম।
শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলায় চার জন এজাহারনামীয় আসামিসহ মোট পাঁচ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে, এই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি এখনও। আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখছি। সবকিছু যাচাই-বাছাই করছি।’ মঙ্গলবার রাতে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জব্বার বাদী হয়ে মামলা করেন।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে মাওলানা সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জামায়াতের ১১৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পল্টন থানায় পৃথক মামলা করে পুলিশ।
আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতনেতা মাওলানা সাঈদী গত সোমবার রাতে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেই খবরে জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার নেতাকর্মী রাতেই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ও শাহবাগে ভিড় করেন। মরদেহ হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে তারা পরে তাণ্ডব চালায় বলে মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার ফারুক আহমেদ।
খন্দকার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যখন মরদেহ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া শুরু হয়, তখন হাজার হাজার জামায়াত-শিবির কর্মী লাশবাহী গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তারা কোনো মতে এই মরদেহ পিরোজপুরে নিয়ে যেতে দেবে না। এসময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে থাকা পুলিশ অফিসার ও পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। সঙ্গে তারা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এই হামলায় ডিসি রমনাসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র অফিসার আহত হন। তারা পুলিশের চার থেকে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।’
খন্দকার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা ধৈর্য সহকারে এই তাণ্ডব সহ্য করি যে তারা একটা মরদেহ নিয়ে যেতে চাচ্ছে নিয়ে যাক। তারপরেও আমরা কোনো শক্তি প্রয়োগ করিনি। ফজরের নামাজের পরে তাদের আবারও অনুমতি দেওয়া হল জানাজা পড়ার। কিন্তু ফজরের নামাজের পরে তারা আমাদের অফিসারদের বের করে বিএসএমএমইউ দখলে নিয়ে নিল। তারা মরদেহ পিরোজপুর নিতে দেবে না। এর মধ্যে তারা ফেসবুকে প্রচার করতে শুরু করল সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের শাহবাগে আসার জন্য। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় তাদের ওপরে আমরা অত্যন্ত সীমিত আকারে শক্তি প্রয়োগ করি। আমরা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বিএসএমএমইউ মুক্ত করে সাঈদীর মরদেহ পিরোজপুরে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।’