আনন্দবাজারের প্রতিবেদন বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি অবজ্ঞা : রিজভী

আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। স্বাধীন দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে নিয়ে আনন্দবাজারের এই ধরনের প্রতিবেদন স্বাধীনতার প্রতি অবজ্ঞা।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় আজ শনিবার (১৮ আগস্ট) জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি-মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রিজভী এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, “আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদন নিয়ে দুদিন ধরে খুব আলোচনা চলছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দিল্লির কূটনীতিকরা বলেছেন, বাংলাদেশের হাসিনাকে দুর্বল করলে ভারত ও আমেরিকার জন্য সুখকর হবে না। আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি। বাংলাদেশ কি স্বাধীন না? আমাদের দেশ তো স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এদেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক একটি দেশ। তাদের নীতি নির্ধারকরা কীভাবে বলতে পারে একজন অবৈধ ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রীকে দুর্বল করলে তাদের স্বার্থ বিকৃত হবে। আমার মাথায় ধরছে না।”
রিজভী বলেন, “এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সেই আন্দোলনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা যদি একদলীয় কোন রাষ্ট্র বলতো তাহলে হতো। কিন্তু এটা বলেছে বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা। তাহলে আমরা কী ভাববো আঞ্চলিকতার আড়ালে আরেকটি কর্তৃত্ববাদের অধীনে আছি। দেশের জনগণ কি এটা ভাববে না? এটাই তো জনগণ ভাববে, মনে করবে। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে উগ্রবাদের জন্ম নেয়। গণতন্ত্র না থাকলেই তো জঙ্গিবাদের উত্থান হয়।”
বিএনপির এই অন্যতম শীর্ষনেতা বলেন, “আমাদেরকে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হচ্ছে সরকার, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও আওয়ামী লীগের গুন্ডাপাণ্ডাদের সাথে। এতগুলো শক্তির সাথে আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে, রাস্তায় নামতে হচ্ছে। তার মানে আমরা ন্যায়ের পক্ষে আদর্শের পক্ষে সত্যের পক্ষে কথা বলি বলেই আমাদের এত সাহস, এত বড় শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি।”
ভারতের কূটনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের এক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জিসানকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। তার খোঁজ নিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ছয় জন নেতা গিয়েছিল। তাদেরকে তুলে নিয়ে গেছে সবাই জানে, এটা গোয়েন্দারা করেছে। আমরা ওই মাইক্রোবাসের নম্বরও জানি। কিন্তু তারা এখনো স্বীকার করছে না। রাষ্ট্রের তো এই চরিত্র হওয়ার কথা ছিল না। ৩০ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া রাষ্ট্র সেই রাষ্ট্রে কেউ কথা বললে অদৃশ্য হয়ে যাবে, এটা হওয়ার কথা ছিল না। আর সেই শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে হবে যে আমার দেশের লোকদের কণ্ঠস্বরকে বন্ধ করার জন্য গলার মধ্যে ফাঁসির দড়ি লাগিয়ে রেখেছে, সেই টিকে থাকবে একটা বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কূটনীতিবিদরা এটা কীভাবে বলতে পারে।”
রিজভী আরও বলেন, “তারা কি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। এটা তো এখন সারা দেশের জনগণের মনে প্রশ্ন জেগে উঠেছে। আমাদের নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারছে না। যেমন গতকাল জিসানকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তেমনি সারা দেশে এরকম অবস্থা চলছে। এরকম নিশ্চিত অন্ধকারের মধ্যে আমাদেরকে পথ চলতে হচ্ছে। যিনি আমাদের আলোর দিশারী সেই বেগম খালেদা জিয়াকে ওরা বন্দি করে রেখেছে, শুধু কর্তৃত্ববাদী একদলীয় আওয়ামী শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। মানবাধিকারহীন গণতন্ত্রহীন শেখ হাসিনার অধীনে পরিচালিত এই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য এটা নানাভাবে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে।”
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের সঞ্চালনায় এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ।