নিরাপত্তা ও সংযোগের জন্য আঞ্চলিক সুযোগ কাজে লাগাতে আগ্রহী বাংলাদেশ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, সংযোগ বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে আগ্রহী। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, সাগর ও মহাসাগরের টেকসই ব্যবহার, ডি-কার্বনাইজেশন, পরিচ্ছন্ন শক্তি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিস্থাপকতা, জনগণের মধ্যে বিনিয়োগ ও সংযোগ স্থাপন এবং একটি টেকসই ও সবুজ ভবিষ্যত গড়ে তোলা বেশিরভাগ দেশের সাধারণত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে রয়েছে।
আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ’স ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক : অপরচুনিটিস অ্যান্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ এবং বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজ যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য অংশীদারদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয় দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন আমরা আমাদের অঞ্চলের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে আমাদের অভিন্নতাকে কেন্দ্রীভূত করি। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বাংলাদেশ ও সমগ্র বিশ্বের জন্য অত্যন্ত কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। যা কয়েকটি ব্যস্ততম সমুদ্র পথ, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য রুট এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সমাজের আবাসস্থল। এই অঞ্চলটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত সুরক্ষা থেকে নিরাপত্তা পর্যন্ত জটিল ও অভিন্ন চ্যালেঞ্জের আধিক্যের সম্মুখীন হচ্ছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে।’
মোমেন বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধিকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। যা সমৃদ্ধি, সামাজিক জবাবদিহি, প্রযুক্তিগত গতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা দ্বারা চিহ্নিত।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যোগাযোগের মাধ্যমে আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক একীকরণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার মতো অভিন্ন চ্যালেঞ্জ যৌথভাবে মোকাবিলায় আমাদের আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
মহাসড়ক, অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় জলপথ, রেলপথ ও বিমানপথের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বহুমুখী সংযোগ, ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর বিচ্ছিন্ন সংযোগ পুনরুদ্ধার, ডিজেল পরিবহনের জন্য ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে জ্বালানি সংযোগ, আন্তঃসীমান্ত পাওয়ার গ্রিড সংযোগ, ডিজিটাল সংযোগ এবং বিআইএন এমভিএ (বাংলাদেশ ভারত মোটর নেপাল) এর মতো ব্যবস্থার মাধ্যমে অন্যান্য প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে এই ধরনের আঞ্চলিক সংহতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারের বহিপ্রকাশ।
মোমেন বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ একটি কানেক্টিভিটি হাবে পরিণত হয়েছে কারণ আমরা বিশ্বাস করি, সংযোগই উৎপাদনশীলতা। অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থসামাজিক অগ্রগতি, দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং রূপান্তরমূলক বিদ্যুৎ-জ্বালানি-সংযোগ-ডিজিটাল অবকাঠামোসহ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।’
পররাষ্ট্র আরও বলেন, ‘ভূ-কৌশলগত অবস্থানের সঙ্গে দ্রুত অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচ্চতর মনোযোগ আকর্ষণ করতে বাধ্য, যা সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেছে। এই অঞ্চলে আমাদের বর্ধিত ভূমিকা এবং দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে, আমরা এই অঞ্চলের সমস্ত দেশের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তিমূলক সম্পর্ক বজায় রেখেছি।’
মোমেন বলেন, ‘দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সংকট, যার উৎপত্তি মিয়ানমারে, কিন্তু বাংলাদেশের ওপর ব্যাপকভাবে চাপ অব্যাহত রয়েছে। এই সংকটের পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার সম্ভাবনা রয়েছে, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নেওয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত এক দশমিক দুই মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে স্থায়ী প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা জোরদার না করে।’