আগুন নেভাতে ডেকচিতে করে পানি দিচ্ছিল আনোয়ার
তখন আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু, পুরোপুরি নির্বাপণ করা যায়নি। দোকানের মধ্যে তখনও কাপড়-চোপড়সহ জিনিসপত্র পুড়ছে। কোথাও কোথাও আগুন জ্বলছে। ধোঁয়া উড়ছে। দোকানের মধ্যে ঢুকে দোকানিরা হাউমাউ করে কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে কারও আবার চোখের জল শুকিয়ে গেছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের পুড়ে যাওয়া কৃষি মার্কেটের দুপুর পৌনে ১২টার দৃশ্য এটি। আজ বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে মার্কেটটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এই যখন অবস্থা, তখন মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ করেন এই প্রতিবেদক। হঠাৎ চোখ আটকে যায় এক কিশোরের দিকে। নাম আনোয়ার হোসেন। ছেলেটি এক ঘণ্টা ধরে আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি ছোট স্টিলের পাত্রে (ডেকচি) করে পানি সেচে দিচ্ছে দোকানের মধ্যে আগুন জ্বলা অংশে। যেন শেষ পণ্য বা কাপড়টা হলেও ভালো রাখা যায় এবং আগুন নিভে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর জন্য প্রচুর পানি ছিটিয়েছে মার্কেটের মধ্যে। পুরো মার্কেটের গলিতে গলিতে পানি আর পানি। সেই পানি ওই স্টিলের পাত্রে নিয়ে দোকানের মধ্যে ছিটিয়ে দিচ্ছিল। তার পাশে আরও দুই শিশু ছিল, তারাও কখনও-সখনও পটে করে পানি এগিয়ে দিচ্ছিল।
আনোয়ারের কাছে জানতে চাওয়া হলে সে এ প্রতিবেদককে বলে, ‘এক ঘণ্টা ধরে এভাবে পানি দিচ্ছি। পাশের গলিতে আমার ভাইয়ের একটি কাপড়ের দোকান ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সেখানে আর নেভানোর মতো কিছু নেই। আমাদের সব শেষ। আর আগে মার্কেটের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি কাউকে। আমাকেও ঢুকতে দিচ্ছিল না পুলিশ। জোর করে ঢুকেছি। তারপর থেকে পানি ঢালছি। যদি একটু আগে হলেও আগুন নিভে যায়, সেজন্য চেষ্টা করছি।’
কথা বলতে বলতে আগুন লাগা স্থানে পানি ঢালছিল কিশোর ছেলেটি। হঠাৎ দৌড় দিল ফায়ার সার্ভিস ডাকতে। একটু বাদেই ফায়ার সার্ভিস হাজির হলো সেখানে। কারণ, তখনও পাশাপাশি কয়েকটি দোকানের মধ্যে আগুন জ্বলছিল। ফায়ার সার্ভিস শুরু করল আগুন নেভানোর কাজ।
ভেতরে এসব দৃশ্য যখন ঘটছিল, তখন মার্কেটের চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড়। তাদের জন্য রাস্তা দিয়ে হাঁটা যাচ্ছিল না। এতে ফায়ার সার্ভিস ও এ কাজে নিয়োজিত সব বাহিনীর কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছিল। আর তাই বারবার বাঁশি দিয়ে পুলিশ উৎসুক জনতাকে সরানোর চেষ্টা করছিল।
এমনকি ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী একবার বলেই বসলেন, ‘উৎসুক জনতার কারণে কাজে অসুবিধা হচ্ছে। মানুষ বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে যেভাবে দেখতে আসছে, মনে হচ্ছে এখানে কোনো নতুন পার্ক হয়েছে বা আশ্চর্যজনক কিছু একটা হয়েছে।’