রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গণছিনতাই!

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকায় দলবদ্ধ বা গণছিনতায়ের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, ছিনতায়ের সময় অনেককে মারধর করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময়ে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বছিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকার ডি-ব্লকের ২ নম্বর রোড ধরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল হেঁটে যাচ্ছিল। দলের সবার হাতে ছুরি, চাপাতিসহ দেশি অস্ত্র ছিল। তাদের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ বছর। দলটি সামনে যাকে পেয়েছে, তার কাছ থেকেই টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে। কাউকে কাউকে কোপানো হয়েছে। ছিনতাইকারীরা পথচারীদের মোবাইল ফোন ও টাকা ছিনতাইসহ রাস্তার পাশের ১৫ থেকে ২০টি দোকানের মালামাল লুটপাট করেছে ও ভাঙচুর চালিয়েছে।
আজ রোববার (১ অক্টোবর) সকালে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভূঁইয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘একদল লোক দোকান ভেঙে মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে বলে জেনেছি। এ বিষয়ে আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। এ ছাড়া, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছি। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।’
এলাকাটিতে চলমান একটি প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত জাহিদুল ইসলাম, শামীমুল ইসলাম ও মো. আব্দুল আজিজ নামে তিন ব্যক্তিও ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেন, 'আমাদের বাড়ি শেরপুর জেলায়। কিছুদিন হলো ঢাকায় এসেছি। শুক্রবার সন্ধ্যায় আমি ডিউটি শেষ করে বাসার নিচে আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। আমার পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন শামীম ও আজিজ। হঠাৎ ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল আমাদের দিকে দৌঁড়ে আসে। সবাই টিন এজার। আমরা কিছু বুঝতে না পেরে রাস্তার পাশেই দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ একটা ছেলে এসে আমার ফোন টান দিয়ে নিয়ে যায়। পরে চাপাতি দিয়ে মাথায় কোপ দেয়। আর কয়েকজন এসে শামীম ও আজিজকে জাপটে ধরে। বলে- কি আছে সব দিয়ে দে। না হলে সমস্যা হবে। আজিজের মোবাইল ফোনটা নিয়ে ছেড়ে দিলেও, টাকা না থাকায় শামীমকে বেধড়ক মারধর করে চলে যায় তারা। এরপর আমাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে আমার মাথায় ছয়টি সেলাই দেয়া হয়। কোনো ঝামেলার ভয়ে থানার যাওয়ার সাহস পাইনি।’
জাহিদুল ইসলামের বাসার সামনে নদীর পাড়েই নূর মোহম্মদের দোকান। পাশেই থাকার ঘর। নদী পাড়ে ঘুরতে আসা মানুষের জন্য চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থাও আছে তার দোকানে। নূর মোহম্মদ গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের এক ভাই এক্সিডেন্ট করেছিল, তাই আমি শুক্রবার ঢাকা মেডিকেলে গিয়েছিলাম। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘরে এসে ভাত খেয়ে মাত্র দোকানে এসে দাঁড়িয়েছি, এরই মধ্যে দেখি মিছিলের মতো লোক আসছে। কয়েকজন গিয়ে জাহিদ নামে ওই ছেলেটাকে মাথায় কোপ দিয়ে ওদের মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিল। আর বাকিরা আমার দোকানের ভিতর ঢুকে টাকা, সিগারেট, চিপস্ যে যেমন পাইছে লুট করছে। চেয়ার-টেবিল ভেঙে চুরমার করে দিলো চোখের সামনে। তাদের হাতে থাকা অস্ত্রের ভয়ে কেউ টু শব্দও করতে পারেনি।’
নূর মোহাম্মদ আরও জানান, ঘটনার পর পর অনেকেই পুলিশকে খবর দিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে রাত সাড়ে ১১টায়। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা আটকের কথাও শোনা যায়নি এখন পর্যন্ত।