নেচে-গেয়ে আদিবাসীদের কারাম উৎসব পালন
সমতলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম। প্রাচীনকাল থেকে এভাবেই কারাম উৎসব পালন করে আসছে সমতলে বসবাসরত আদিবাসীরা। গতকাল শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর ঝরনা স্কুল মাঠে এ ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব পালন করে আদিবাসী সম্প্রদায়।
কারাম উৎসবে অংশ নেয় নওগাঁ ছাড়াও বিভিন্ন জেলার ১৮টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল।
এ সময় তারা লাল-হলুদ-বেগুনি শাড়ি আর খোপায় বাহারি ফুল গুঁজে ঢোল আর মাদলের তালে নাচে-গানে মাতোয়ারা হয়ে উঠে। বর্ণিল সাজে নেচে-গেয়ে তুলে ধরে নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন জায়গা থেকে আসতে শুরু করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের দলবদ্ধ নারী-পুরুষ। এরপর বিকেল হতেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিজস্ব ভাষায় গাওয়া গান আর ছন্দময় নাচে অংশ নেয় তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী নারী-পুরুষ।
আশ্বিনের বিকেলে এমন বৈচিত্র্যময় উৎসব দেখতে ঢল নামে ওঁরাও সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। ক্ষণিকের বিনোদনের এমন উৎসবে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা।
কারাম মূলত একটি বৃক্ষ। আদিবাসী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে এটি একটি পবিত্র গাছ এবং মঙ্গলের প্রতীক। উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা (উৎসব) শুরু করে আদিবাসী নর-নারীরা। তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপোস থাকে। সন্ধ্যার পর মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারামগাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনে। এরপর তারা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করে। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারামগাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনি শোনান। সেইসঙ্গে চলে কাহিনির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। ব্যাখ্যা শেষ হলে বেদির চারধারে ঘুরে ঘুরে যুবক-যুবতীরা নাচতে থাকে।
সাপাহার উপজেলা আদিবাসি পরিষদের সভাপতি ভুট্টু পাহান বলেন, প্রতি বছরই কারাম উৎসব করা হয়ে থাকে। এ উৎসবে সহোদর দুই ভাই ধর্মা ও কর্মার জীবনী তুলে ধরা হয়। এতে আমাদের সংসারে অভাব-অনটন দূর হয়ে যায়। বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকে রক্ষা হয়। এমন বিশ্বাস থেকে বংশপরম্পরায় এ কারাম ডাল পূজা করে আসা হচ্ছে।
এদিকে নাচ-গান শেষে এক সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এ সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, কারাম উৎসব সমতলের আদিবাসীদের প্রাণের উৎসব। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি এটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার বিশেষ উদ্যোগ। আগে ছোট আকারে কারাম উৎসব আয়োজন হলেও এখন ব্যাপক পরিসরে হচ্ছে। কারাম উৎসব সমতলে বসবাস করা নৃ-গোষ্ঠীর প্রাণের উচ্ছ্বাস। এ উৎসব বরেন্দ্র অঞ্চলকে মিলন মেলায় পরিণত করে।
খাদ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান সরকার দেশের সব নাগরিকের সুষম উন্নয়নে বিশ্বাসী। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি রয়েছে। তাদের উন্নয়নে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। আদিবাসীদের জন্য সরকার স্পেশাল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।