প্রবাসীর স্বজনকে জিম্মি করে চলত ‘লাগেজ ব্যবসা’, তিনজন গ্রেপ্তার
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীর স্বজনদের জিম্মি করে লাগেজ পণ্যের ব্যবসা করত একটি চক্র। দেশে ও বিদেশে অবস্থান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা চালিয়ে আসছিল কর্মযজ্ঞ। ফাঁকি দিচ্ছিল শুল্ক। সম্প্রতি এক প্রবাসীর বাবাকে জিম্মি করার অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) শান্তিনগর থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলে বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এসব তথ্য তুলে ধরেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন জানান, তিনজনকে গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণ, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রসাধনীসহ আনুমানিক ৬০ লাখ টাকার পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—খোরশেদ আলম (৫২), কুমিল্লা, জুয়েল রানা মজুমদার (৪০) ও মাসুম আহমেদ (৩৫)।
কমান্ডার মঈন বলেন, গত সোমবার (৯ অক্টোবর) রাতে যশোরের চৌগাছা থেকে সৈয়দ আলী মন্ডল (৬৫) তার সৌদি প্রবাসী ছেলেকে নেওয়ার জন্য ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এসে নিখোঁজ হন। পরিবার সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। না পেয়ে তার মেয়েজামাই রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ছাড়া উদ্ধারের জন্য পরিবার র্যাব-৪-এ আবেদন করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সন্ধ্যায় র্যাব-৩ ও র্যাব-৪-এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকার একটি বাসা থেকে সৈয়দ আলীকে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা অপহরণের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
সৈয়দ আলীর ছেলে ও প্রবাসী নুরুন্নবীর বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, সৈয়দ আলীর ছেলে প্রবাসী নুরুন্নবী চলতি বছরে ২০ আগস্ট উন্নত জীবন যাপনের আশায় সৌদি আরবে যান। কিন্তু, সেখানে ভালো চাকরি সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় চক্রের মধ্যপ্রাচ্যের হোতা আবু ইউসুফ এবং তার সহযোগীরা নুরুন্নবীর আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নেয়। তারা বলে, তাকে বাংলাদেশে আসার ফ্রি বিমানের টিকেট দেবে, তবে তাকে স্বর্ণালংকারসহ বেশকিছু দামি কসমেটিকস ও ইলেকট্রনিক পণ্য এবং চকলেট ভর্তি লাগেজ বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে হবে। সেগুলো দেশীয় হোতা খোরশেদ আলমের কাছে পৌঁছে দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয় তাকে। এতে রাজি হন প্রবাসী নুরুন্নবী।
গত ৯ অক্টোবর দেশে প্রবাসী নুরুন্নবীর বাবা সৈয়দ আলী একই তারিখ রাতে ছেলেকে রিসিভ করতে ঢাকায় আসেন। কিন্তু, চক্রের সদস্যরা অভিনব কৌশলে তাকে অপহরণ করেন। এরপর ইউসুফের পাঠানো পণ্যের নিরাপদে সৈয়দ আলীকে জামানত হিসাবে জিম্মি করা হয়।
প্রতারকদের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্য কেন্দ্রিক চক্রে ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য রয়েছে। চক্রটি একজন বিমানযাত্রীর যে পরিমাণ মালামাল বহনের সুযোগ থাকে, তার সম্পূর্ণটাই তারা ব্যবহার করতেন। শুল্ক ফাঁকি দিতে তারা এমন কৌশলে পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে এভাবে স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন পণ্য দেশে আনতেন।
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের ফাঁদে ফেলত চক্রটি। ফ্রি টিকিটে দেশে ফেরায় ইচ্ছে জানালে পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজ নিজেদের জিম্মায় নেওয়া হতো। পরে তাদের মাধ্যমে স্বর্ণালংকারসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রীতে পূর্ণ ২৫ থেকে ৩০ কেজির ওজনের লাগেজ দেশে পাঠাত চক্রটি, যার আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা।
এরপর প্রবাসী বিমানে ওঠার পরে তার অজান্তেই স্বজনদের অপহরণ করে জিম্মি করত। প্রবাসী ব্যক্তি ঢাকায় পৌঁছানোর পর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা মালামালের লাগেজ চক্রের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হলে জিম্মি থাকা স্বজনকে মুক্তি দেওয়া হতো।