রাজশাহীর পূজামণ্ডপে বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস
বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশ পরিচিত হওয়ার অগ্রযাত্রা যেন এক পর্দায় ফুটে উঠেছে রাজশাহী নগরীর এক পূজামণ্ডপে। এতে আলপনা অঙ্কিত ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-বাংলার ঘরের মধ্যে যেন ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ।
রাজশাহী নগরীর মালোপাড়ায় শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরে এবারের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন সবার নজর কেড়েছে।
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, শিউলি ফুলের সুভাস, প্রকৃতির হিমেল হাওয়া ধারণ করেছে এক উৎসবমুখর আমেজ। দশভুজা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে ধরনীতে আবির্ভূত হন। দেবী দুর্গার আরাধনার সময়কে ধরা হয় সব ধরনের অশুভ-অসত্যকে পরাভূত করে সত্য ও ন্যায়ের বাতাবরণ প্রতিষ্ঠার শুভ সময়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সাজে ও আঙ্গিকে দেবী দুর্গার পূজার আয়োজন করে থাকে। একেকটা মণ্ডপ সাজানো হয় একেকটা থিমের আঙ্গিকে। রাজশাহী নগরীর মালোপাড়ার শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের এবারের ব্যতিক্রমী আয়োজন সবার নজর কেড়েছে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের চারটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে মুজিববাদ প্রতিষ্ঠিত। চারটি স্তম্ভ হলো-বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। তাই মন্দিরের প্যান্ডেলের চারটি পিলারের নাম দেওয়া হয়েছে চারটি স্তম্ভের নামানুসারে। যার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাস লিখিত এক ব্যানার।
ব্যানারের শুরুতে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর সাধারণ নির্বাচন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৬৮-এর আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯-এর গণঅঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের ছবির পাশাপাশি সবার বোঝার সুবিধার জন্য রয়েছে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। সেই সঙ্গে ব্যানারে ফুটে উঠেছে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডও।
২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য দেশব্যাপী যে গণজাগরণ হয়েছিল তাও বর্ণিত হয়েছে এই ফ্রেমে। ২০২১ সালে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ক্ষত যে এখনও সংখ্যালঘুদের মধ্যে রয়েছে, তা বোঝানোর জন্য এর প্রতিবাদও স্থান পেয়েছে ফ্রেমে। দেশব্যাপী উন্নয়নের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থান পেয়েছে ফ্রেমের উন্নয়ন অংশে।
বাংলাদেশের মেয়েরা আজ পিছিয়ে নেই। তারাও বিশ্বকে জয় করতে পারে, তা বোঝানোর জন্য সাফ চ্যাম্পিয়নে বাংলাদেশের মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের ছবি সেটি স্মরণ করিয়ে দেয়।
বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় শিক্ষানগরী রাজশাহী যে পিছিয়ে নেই, তা বোঝানোর জন্য গ্রিন সিটি ক্লিন সিটির বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ছবি স্থান পেয়েছে ফ্রেমের শেষ অংশে।
আর ফ্রেমের সবার উপরে বড় করে লেখা রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাল ১৯৭১। যার প্রতিটা অঙ্ক প্রকাশ করে—এক তর্জনীর হুঙ্কারে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।