সিরাজগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে দাফন হলো আবুল হোসেনের মরদেহ
সৌদি আরবের আদলে নিজের কবরস্থান তৈরি করে রেখেছিলেন প্রয়াত সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও মাদারীপুর-৩ আসনের চার বারের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন। বাড়ির পাশেই স্বামী-স্ত্রীর জন্য মসজিদও করেছিলেন। কিন্তু সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে শ্বশুরবাড়িতে আজ শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) দাফন করা হয়েছে তাঁর মরদেহ।
সর্বসাধারণকে এক নজর দেখার জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলির মঞ্চও প্রস্তুত করেছিল পরিবারের সদস্য ও নেতাকর্মীরা। মাইকিং, হ্যালিপ্যাডসহ সব কিছু প্রস্তুত থাকলেও দাফন করা হলো না মাদারীপুরের ডাসারে। এমন কি মরদেহ এক নজর দেখারও সুযোগ হলো না মাদারীপুরবাসীর।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও শিক্ষানুরাগী প্রয়াত আবুল হোসেনের মরদেহ দাফন করতে পারেনি তাঁর নির্বাচনী এলাকার মানুষ। এতে ক্ষোভের অন্ত নেই তাদের।
সাবেক ছাত্রনেতা মশিউর রহমান সবুজ বলেন, ‘আবুল হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘ দিন রাজনীতি করেছি। তার সঙ্গেই আমার রাজনীতির সব কিছু ছিল। কিন্তু প্রিয় নেতার জানাজায় অংশ নিতে পারলাম না। কেন তার স্ত্রী যে এমন কাজটি করলেন, তা বুঝে আসছে না। আমার মতো হাজার হাজার নেতাকর্মীর চোখের পানি সারা জীবনই আবুল হোসেনের জন্য ঝরবে। তার মতো নেতা আর শত বছরেও কালকিনি-ডাসারে তৈরি হবে না।’
সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২৫ অক্টোবর রাত ২টায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ১৯৫১ সালে মাদারীপুরের ডাসারের বেতগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশায় একজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী ছিলেন।
আবুল হোসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে মাদারীপুর-৩ আসন থেকে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
সৈয়দ আবুল হোসেন স্ত্রী খাজা নার্গিস, দুই মেয়ে সৈয়দা রুবাইয়াত হোসেন ও সৈয়দা ইফফাত হোসেন রেখে গেছেন। তিনি অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন। তাঁর ছোট ভাইও আক্ষেপ করলেন ভাইকে দাফন করতে না পেরে।
সৈয়দ আবুল হোসেনের ছোট ভাই ডা. আবুল হাসান বলেন, ‘আমি ঢাকাতে ছিলাম, ঢাকাতে জানাজায় অংশগ্রহণ করিনি, সেখান থেকে বাড়িতে এসেছি বড় ভাইয়ের জানাজা আর দাফন করতে। কিন্তু আমার ভাবি খাজা নার্গিস তাঁর স্বামীর মরদেহ ডাসারের মাটিতে দাফন করতে দিলেন না। তাঁকে বার বার অনুরোধ করেছি যে, অন্তত ডাসারে জানাজা শেষে এনায়েতপুর নিয়ে যেতে। কিন্তু তাতেও তার মন গলেনি। অবশেষে তিনি আমার বড় ভাইকে শ্বশুরবাড়িতে দাফন করলেন। এতে ডাসারবাসীর কাছে চির জীবনের জন্য ছোট হয়ে গেলাম।’
মাদারীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আমিও ঢাকাতে জানাজায় অংশ নেইনি। ভাবছিলাম, ডাসারে জানাজায় অংশ নিব। কিন্তু সবার সঙ্গে আমিও অবাক হয়েছি, এটা তাঁর স্ত্রী আর সন্তানদের ইচ্ছে। তবে সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো মানুষকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। তাঁর অবদান চিরদিন আওয়ামী লীগ মনে রাখবে।’
সৈয়দ আবুল হোসেনের ভাতিজা সৈয়দ বাবু বলেন, ‘আবুল হোসেনকে কী কারণে তার নিজ গ্রামে দাফন করা হলো না, কেন হলো এনায়েতপুরে—বিষয়টি বুঝলাম।’
ক্ষোভের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমার কাছে খুব কষ্ট লাগল আবুল হোসেনের মতো এত বড় একজন মানুষকে নিজ গ্রামে দাফন করা হলো না। দাফন করা হলো তাঁর শ্বশুর বাড়িতে।’