পাঁচ বছরের সন্তানকে বুঝে পেলেন ভারতীয় মা
ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের কাছে পাঁচ বছরের শিশু সন্তানকে তুলে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। তবে, শিশু সন্তানকে নিয়ে আদালতের অনুমতি ছাড়া তিনি বাংলাদেশের বাইরে যেতে পারবেন না। আর বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে দুদিন সন্তানকে দেখতে যেতে পারবেন। একইসঙ্গে সেই বাবাকে এ মামলায় জামিন দেওয়া হয়েছে।
শিশু সন্তানকে ফেরত চেয়ে রিট শুনানি শেষে আজ সোমবার (৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ এ রায় দেন।
এর আগে ভারতীয় নারী সাদিকা সাঈদ নিজ শিশু সন্তানকে ফেরত চেয়ে ২০২১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। তা জানতে পেরে সন্তান নিয়ে দেশ ছাড়েন স্বামী শাহিনুর টি আই এম নবী। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে আর দেশমুখি হননি তিনি।
সম্প্রতি দেশে ফিরে সেই শাহিনুর জামিন নিতে গেলে আপিল বিভাগ শিশুটিকে সর্বোচ্চ আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।
ভারতীয় নারীর আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘দীর্ঘ দুবছর অসহায় এই মায়ের কষ্ট আমরা দেখেছি। ওর মা অসুস্থ, নানী মারা গেছেন। তারপরেও সে ভারতে যেতে পারেনি। অনেক কষ্ট করেছে, আপনারা ওর জন্যে দোয়া করবেন।’
রায়ের পর সাদিকা সাঈদ বলেন, ‘আপিল বিভাগকে কোটি কোটি ধন্যবাদ আমার সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি আমার সন্তানকে গত দুই বছর চোখের দেখাটাও দেখতে পারিনি।’
সন্তানের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্ব ছাড়তে চাওয়া এই মা বলেন, ‘আমার বাচ্চা বাংলাদেশি। আমি ওর জন্যে এ দেশের নাগরিকত্ব নিতে চাই এবং এখানেই থাকতে চাই।’
ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদের সাদিকা শেখ নামে এক নারীকে পছন্দ করেন রাজধানীর এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর। ২০১৭ সালে হায়দরাবাদে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন।
২০১৮ সালে তাদের ঘরে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। সাদিকা শেখকে মারধরও করেন তার স্বামী। বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয়স্বজনরা জানতে পারেন। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও সমাধান হয়নি। পরে মেয়েটির বোন মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) কাছে আইনি সহায়তা চান।
পরে ২০২১ সালের ৮ আগস্ট সাদিকা শেখ ও তার শিশু সন্তানসহ আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হেবিয়াস কর্পাস রিট করে ফ্লাড পরিচালক ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের শিক্ষক লুলান চৌধুরী।
ভারতীয় মায়ের পক্ষের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ‘হাইকোর্টে মামলার পরপরই বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর ভারতীয় ওই নারীকে ডিভোর্স দেন।’