বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে শেখানো কথা বলেছেন মিয়ান আরাফি : ডিবি প্রধান
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘উপদেষ্টা’ পরিচয় দেওয়া মিয়ান জাহিদুল ইসলাম আরাফিকে (মিয়ান আরাফি) কাশিমপুর হাই-সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।
আজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ ওই কারাগারে প্রবেশ করেন এবং মিয়ান আরেফিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেলা ২টা ২০ মিনিটে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মিয়ান আরাফি পুলিশকে জানিয়েছেন, লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সাহেব তাঁকে শিখিয়ে দিয়ে যে অন্য দিকে ধাবিত করেছেন এটা তিনি বুঝতে পারেননি। তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল। ফাঁদে পড়ে তিনি ২৮ তারিখে সংবাদ সম্মেলনে যে কথাগুলো বলেছেন তাঁকে যেভাবে শিখিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেভাবে বলেছেন। এখন তিনি অনুতপ্ত। এটা তিনি ঠিক করেননি।
কারা ফটকে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, মিয়ান আরাফি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সাহেব যা শিখিয়ে দিয়েছেন আর যা বলতে বলেছেন ২৮ অক্টোবর বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে তিনি সেভাবেই বলেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসায় গিয়েছেন সারওয়ার্দী। মিয়ান আরাফিকে গুলশান অফিসে বিএনপির ব্রিফিংয়ে যাওয়ার জন্য সব কিছু ব্যবস্থা করে দিয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। সেখানে মিয়ান আরাফি যেন হাসান সারওয়ার্দীর নাম প্রকাশ করেন তাও শিখিয়ে দিয়েছেন। তাঁকে যেন হাইলাইটস করা হয়।
মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আরও বলেন, ‘২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা, পুলিশের গায়ে আঘাত করা এবং একজন পুলিশ সদস্যকে নৃশংসভাবে হত্যা করা, সাংবাদিকদের আহত করা, আবার তাৎক্ষণিক সন্ধ্যার সময় সারওয়ার্দী সাহেব মিয়ান আরাফিকে নিয়ে বিএনপির পার্টি অফিসে ঢোকা সব ঘটনা একটার সঙ্গে আরেকটা সংযুক্ত। অর্থাৎ একই সূত্রে গাঁথা। সে কারণেই আমরা অনেক নেতাকে নিয়ে এসেছি, জিজ্ঞাসাবাদ করছি। লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সাহেবকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তিনি অনেক কথা স্বীকার করেছেন। যে জায়গাগুলোতে উনি স্বীকার করছেন না, সেটা আমরা তাঁর কাছ থেকে জেনে নিলাম। আমরা যদি মনে করি ভবিষ্যতে আরও কোনো তথ্য জানার প্রয়োজন আছে তাহলে আমরা আবারও তাঁকে নিব অথবা এখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’
হারুন অর রশিদ আরও বলেন, মিয়ান আরাফি বিএনপির কার্যালয়ে গিয়েছেন ২৮ অক্টোবর সন্ধ্যায়। এর আগেও তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির বিভিন্ন নেতার নম্বর পাঠিয়েছেন লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী। তাঁকে বলা হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলার জন্য। মিয়ান আরাফি বাংলাদেশে আসার পর বিএনপিনেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর বাসায়ও লে. জেনারেল (অব.) চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী সাহেব গাড়ি দিয়ে পাঠিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার নামও প্রকাশ করেছেন।’
মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মিয়ান আরাফি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে তিনি কখনও কথা বলেননি। তবে করোনা মহামারির সময় যখন জুম মিটিং হয়েছিল তখন জো বাইডেনের স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। এরপর তার আর কারও সঙ্গে কথা হয়নি।
আমরা তদন্ত করছি, তদন্তের গভীরে আরও কী আছে—সেটা তদন্ত করে বের করব।
গত ২৮ অক্টোবর (শনিবার) বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক মিয়ান আরাফি। তিনি নিজের পরিচয় দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ হিসেবে। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হলে ২৯ অক্টোবর রাজধানীর হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এরপর থেকে তিনি কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছেন।