নওগাঁ পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব
নওগাঁর পৌরসভার মেয়র মো. নজমুল হক সনির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে ১১ জন কাউন্সিলর। অশালীন আচরণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টির অভিযোগে অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন পৌরসভার ৯ কাউন্সিলর ও দুজন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা সেই আবেদন গতকাল রোববার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. গোলাম মওলার কাছে জমা দেওয়া হয়।
আবেদনে কাউন্সিলররা অভিযোগ করেন, মেয়র সনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় কাউন্সিলরদের সঙ্গে অশালীন আচরণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি করে আসছেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিক দেখিয়ে পারিশ্রমিকের অর্থ উত্তোলন করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গোপনে কোটেশনের মাধ্যমে টেন্ডার করে পরবর্তীতে কাজ না করে অর্থ উত্তোলন করেন। মাসিক সভার আলোচনার বাইরে ইচ্ছে মতো রেজুলেশনে বিভিন্ন ব্যয় দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করেন। এসব বিষয়ে বারবার নিষেধ করার পরেও তিনি এতে কর্ণপাত করেননি।
অনাস্থা প্রস্তাবের ওই আবেদনে আরও বলা হয়, পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ল্যান্ড ফিল্ড) স্থাপনা ও নতুন পৌর ভবন নির্মাণে অতি নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করছেন। এসব বিষয়ে মাসিক সভায় কাউন্সিলররা মেয়রের কাছে অভিযোগ করলে তিনি তা আমলে নেননি। উল্টো কাউন্সিলরদের বলেন, পৌরসভার প্রধান আমি, কাজটা আমার। অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করুক আমি তা চাই না।
ওই অভিযোগপত্রে জাকের আলী নামে একজন শ্রমিকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়, দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে শ্রমিকের বিষয়ে জাকের আলী মেয়রের অনিয়মের বিরুদ্ধে মুখ খুললে তাকে গত ২০২২ সালের ১১ এপ্রিল নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় মেয়রকে আসামি করে নওগাঁ সদর মডেল থানায় মামলা হয়, যা বর্তমানে বিচারাধীন।
এ ছাড়া ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামান সাগর ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর মেয়র বরাবরে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের বিষয়টি এজেন্ডা হিসেবে ৩১ অক্টোবরের মাসিক সভায় আলোচনা সূচিতে অন্তর্ভূক্তির জন্য বলেন। তবে, এ নিয়ে মেয়র সনি মাসিক সভায় জাতির জনককে অবমাননা ও বিভিন্ন অশালীন ভাষা প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে কাউন্সিলর সাগর ২০২১ সালের ২ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ দেন। বিষয়টি বর্তমানে তদন্তনাধীন রয়েছে।
অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদনে পৌরসভার জরুরি নথি চুরির কথাও বলা হয়েছে। বলা হয়, চুরির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মেয়রকে মাসিক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে, তিনি এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ ছাড়া তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরেও রাষ্ট্রবিরোধী মামলার আসামি হন ও জেল হাজতে আটকও ছিলেন।
নওগাঁ পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সারোয়ার তানজিদ সম্রাট বলেন, ‘আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পৌরসভার বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার আছি। অনেকবার মাসিক সভায় এবং মৌখিকভাবে এসব অনিয়ম বন্ধ করতে মেয়র সনির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু, তিনি আমাদেরকে সব সময়ই পাশ কাটিয়ে গিয়েছে। মেয়রের এক গুয়েমির কারণে আমরা কাউন্সিলররা আমাদের ওয়ার্ডে কোনো প্রকার উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারছি না। তার কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়ছি। যার কারণে, আমরা সমস্ত কাউন্সিলররা বাধ্য হয়ে জরুরি সভার মাধ্যমে মেয়রের প্রতি অনাস্থা এনেছি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেছি।’
অভিযোগ ও অনাস্থার বিষয়ে মেয়র সনি বলেন, ‘আমি জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আমি পর পর তিনবার পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। বিগত প্রায় সাড়ে ১২ বছর আমি সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পৌরসভাকে পরিচালনা করে আসছি। বর্তমান পৌর পরিষদের অধিকাংশ কাউন্সিলর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অন্যায় দাবী করে আসছিল। যা আমার পক্ষে পূরুণ করা সম্ভব নয়। এ কারণে বিভিন্ন সময় তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।’
মেয়র বলেন, ‘বর্তমানে সারা দেশে বিএনপি এক দফার আন্দোলন চলছে। আমি বিএনপি থেকে নির্বাচিত মেয়র হওয়ায় নিয়মিত অফিস করতে পারছি না। এই সুযোগে পৌর কাউন্সিলরা আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। আমি মনে করি, এটা আমার বিরুদ্ধে গভীর যড়যন্ত্র, অপপ্রচার ও মিথ্যাচার।’
এ বিষয়ে নওগাঁর ডিসি গোলাম মওলা বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের আবেদন আমার কাছে পৌর কাউন্সিলরা দিয়ে গেছে। এটা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে লেখা। এখানে আমার কিছু করার নেই। আমি আজ সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। মেয়রের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় এখন মন্ত্রণালয়ের।’