ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কাঠগড়ায় আসামিকে থাপ্পড়!
লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুসরাত জামানের নির্দেশে গতকাল মঙ্গলবার এজলাসের ভেতর কাঠগড়ায় আবদুল্লাহ আল মামুন নামে এক আসামিকে (পুলিশ কনস্টেবল) থাপ্পড় মারার ঘটনা ঘটেছে। আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুর কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ শফিকুল ইসলাম মুকুল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় আইনজীবীরা নুসরাত জামানের আদালত বর্জন করেছেন। এ ঘটনায় তাঁকে (বিচারক) লক্ষ্মীপুর থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জামান মামলার শুনানির পর মামুন নামে এক আসামিকে এজলাসে ডেকে নেন। পরে পুলিশের এক কনস্টেবলকে ওই আসামিকে দুটি থাপ্পড় দিতে বলেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কনস্টেবল আসামিকে থাপ্পড় দেন। মামুনও পুলিশের একজন সদস্য। এই ঘটনায় একটি প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে এজলাসের ভেতর থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার আইনগত প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগী আবদুল্লা আল মামুন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। একই সঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও অভিযোগটি দিয়েছেন। মামুন চট্টগ্রামের মিরসরাই থানার মোবারকঘোনা গ্রামের সামছুল হকের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম রেঞ্জে পুলিশ (বিপি-৯৭১৮২০৯৫৬২) সদস্য হিসেবেও কর্মরত রয়েছেন।
অভিযোগে আবদুল্লাহ আল মামুন উল্লেখ করেন, স্ত্রী সুমাইয়া সুলতানা বাদী হয়ে মামুনের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সদর) আদালতে যৌতুক আইনে একটি মামলা করেন। মামলাটি সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩ নং আদালতে বিচারাধীন। গতকাল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। বাদীপক্ষ দুজন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করেন। সাক্ষীর জেরা শেষে মামুন এজলাস থেকে বের হয়ে বারান্দায় যান। এ সময় তাঁকে বাদী ও তাঁর মা পারুল বেগম মারধর করেন। বিষয়টি তিনি আদালতের বিচারক নুসরাত জামানকে জানান। কিন্তু বিচারক তাঁর কথা না শুনে তাঁকে এজলাসের কাঠগড়ায় ডেকে নেন। পরে পুলিশ কনস্টেবল কবিরকে দুটি থাপ্পড় দেওয়ার নির্দেশ দেন। বিচারকের নির্দেশে বিচারপ্রার্থী জনগণের সামনেই কনস্টেবল কবির তাকে দুটি থাপ্পড় দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিরূপ আচরণও করা হয়।
বিচারক তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে চড় দিয়েছি, এখন আমি নিজে তোকে চড় মারব।’ পরে আদালতের নির্দেশে মামুনকে কোর্ট কাস্টডিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিবাদীর আইনজীবী আবদুর রহিম রাজু বলেন, আদালতের এজলাসে ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জামান কনস্টেবলকে দিয়ে আসামিকে থাপ্পড় দিয়েছেন। এটি আইন বহির্ভূত ঘটনা। এ ঘটনায় আইনজীবী সমিতি সাধারণ সভা করেছে। আজ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সঙ্গে সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বসবেন। প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে- নুসরাত জামানের আদালতে কোনো আইনজীবী যাবেন না। তাঁকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে সভা করেছি। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত নিলে জানানো হবে।’
লক্ষ্মীপুর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমরান হোসেন ফয়সাল বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বাইরে আছি। এ বিষয়ে এখন বিস্তারিত বলতে পারব না।’