তফসিলের পর ব্যাপক নাশকতার চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছে পুলিশ : ডিএমপি
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকায় ব্যাপক নাশকতার চেষ্টা হলেও সেটি ঠেকিয়ে দিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন এ দাবি করেন।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে আজ বিস্ফোরক সরঞ্জামসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএমপি। সে সময় ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বচনের তফসিল ঘোষণার পর ঢাকার বিভিন্ন এলাকাতে নাশকতার প্রয়াস বেড়েছে। কয়েকটি এলাকায় ককটেল ছুড়ে মেরেছে, তবে পুলিশি তৎপরতার কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, আমরা বেশ কিছু জায়গায় বিস্ফোরক জাতীয় বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের প্রচেষ্টা লক্ষ করেছি। গতকাল ভাসানটেকে একটি নির্মাণাধীন ভবনে বিস্ফোরক সামগ্রীসহ জমায়েত হওয়া আটজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে যে পরিমাণ নাশকতা সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে, সেসব ব্যবহার করতে পারলে নাশকতা ব্যাপকতা আরও বাড়তে পারত।
নাশকতার পরিকল্পনা ও নাশকতা করার সময় গত বুধবার রাতে রাজধানীর ভাষানটেক এলাকা থেকে আটজন, শাহআলী থেকে একজন ও শাহবাগ এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—মাহফুজ হোসেন মুনা (২০), মো. ইয়াছিন (১৯), মো. ফরহাদ (১৯), মো. মাহি (১৮), মো. আউলাদ হোসেন (১৮), মো. নাছিম (১৮), মো. আমজাদ আলী হোসেন (১৮), মো. তানভীর হোসেন (১৮), মো. নিজাম উদ্দিন জসিম, নূর মোহাম্মদ শিকদার (২৩), মোহাম্মদ বখতিয়ার চৌধুরী ওরফে শাহীন (২৪) ও মো. রুবেল (২০)।
এদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন জসিম রূপনগর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গ্রেপ্তার বাকিরাও অবরোধের কর্মসূচির সমর্থক, তবে তাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, ডিএমপি সভা-সমাবেশসহ ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে অনেক আন্তরিক। চার মাস ধরে ঢাকায় রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ডিএমপি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরপরও আমাদের কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে। তারা সবাই অবরোধের সমর্থনে এসেছে, তবে আমরা প্রত্যেকের পদবি যাচাই-বাছাই করছি।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন আরও বলেন, ঢাকায় চার-পাঁচ হাজার বাস চলাচল করে, লাখ লাখ যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে কিছু যানবাহন যত্রতত্র পার্কিং করা থাকে। অরক্ষিতভাবে অনেক জায়গায় যে গাড়িগুলো থাকে, নাশকতাকারীরা এ সুযোগটা নেয়। তবে নাশকতা যেটি করেছে, সেটা তাদের প্রচেষ্টা বা উদ্যোগের চেয়ে কম। তবে চোরাগোপ্তা হামলার শতভাগ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ। আমাদের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টাই ডেপ্লয়মেন্ট করা থাকে। আমাদের সব অফিসাররাও চেষ্টা করছে নাশকতা মিনিমাইজ করার জন্য।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, শহরে যে পরিমাণ যানবাহন সে পরিমাণ পার্কিংয়ের জায়গা নেই। যদি সিকিউরড জায়গায় পার্কিং সিস্টেম থাকত, তাহলে এক জায়গায় আমরা নিরাপত্তা দিয়ে রাখতাম। কিন্তু গাড়িগুলো ছড়ানো-ছিটানো থাকে, আর তারা সুযোগটা নেয়। এরপরও আমরা ১৯ জনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছি, এটা সহজ কাজ নয়।
বিস্ফোরক সামগ্রী কোথা থেকে সংগ্রহ করছে জিজ্ঞেস করলে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, যারা জোগাড় করতে চায়, তারা ঝুঁকি নিয়েও জোগাড় করে। এরপরও আমরা লুজ পেট্রল বিক্রির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। বিভিন্ন কেমিক্যাল যেগুলো গার্মেন্টসে ব্যবহার করা হয়, দেখা গেছে তারা সেগুলো কোনোভাবে সংগ্রহ করে বিভিন্ন সামগ্রী মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরি করে।
বাসগুলোর নিরাপত্তায় নির্ধারিত স্থানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে কি না, জানতে চাইলে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, আমাদের অবস্থান থেকে প্রচেষ্টার ঘাটতি নেই। তারপরও বাস্তবতা দেখেন। ঢাকায় যে পরিমাণ মানুষ, সে পরিমাণ জায়গা নেই। পর্যাপ্ত পার্কিং সিস্টেম নেই স্বীকার করতেই হবে। বড় টার্মিনালে অনেক বাস থাকেই। তারপরও সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার বাস চলাচল করে, যেগুলোর জন্য পর্যাপ্ত পার্কিং নেই। তবে আমাদের প্রচেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।