সপ্তাহে দুদিন সন্তানকে দেখতে যেতে পারবেন মার্কিন বাবা
গ্যারিসন লুটেলের সঙ্গে বিয়ে হয় বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা ফারহানা করিমের। একটি সন্তানও হয় তাদের। পরে আসে আরও এক সুখবর–নতুন করে বাবা-মা হতে চলেছেন তারা। এরইমধ্যে স্বজনদের সঙ্গে থাকার কথা বলে দেশে আসেন ফারহানা। এরপর মোড় নেয় ঘটনার। যোগাযোগ বন্ধ করে দেন গ্যারিসনের সঙ্গে। একপর্যায়ে স্ত্রীর সন্ধানে দেশে এসে গ্যারিসন দেখেন, অন্যের ঘর করছেন ফারহানা। দেখা করতে দেওয়া হয়নি নিজের সন্তানের সঙ্গেও। এরপর আইনের আশ্রয় নেন তিনি। তার প্রেক্ষিতে এলো হাইকোর্টের আদেশ। আদালত বলেছেন, সপ্তাহে দুদিন সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন গ্যারিসন। একসঙ্গে আদালত দিন ও সময় বেঁধে দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত বলেছেন, ঢাকার উত্তরা ক্লাবে প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার মা ফারহানা করিম সন্তানকে নিয়ে আসবেন। সেখানে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকার সময় বাবা গ্যারিসন লুটেল সন্তানের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। যদিও আরেক সন্তানের বয়স এক মাস হওয়া য় তাকে দেখার অনুমতির বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত।
এর আগে রুদ্ধদ্বার কক্ষে মার্কিন বাবা গ্যারিসন লুটেল ও বাংলাদেশি মা ফারহানা করিমের বক্তব্য শোনেন দুই বিচারক। আদালতে গ্যারিসনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। তাঁকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ। আর ফারহানা করিমের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আদালত সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন সন্তানদের কোনো খোঁজ-খবর না পেয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ছুটে আসেন গ্যারিসন। বাংলাদেশে এসে সন্তানদের আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। রিটের শুনানি নিয়ে দুই শিশু সন্তানসহ বাংলাদেশি মা ফারহানা করিমকে আদালতে হাজির করতে উত্তরা থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আদেশ দেন হাইকোর্ট।
গ্যারিসন লুটেলের আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ব্যবসায়ী গ্যারিসন লুটেল। তিনি বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা ফারহানা করিমকে ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। তিন বছর আগে তাদের প্রথম সন্তান হয়। চলতি বছরের শুরুতে ফারহানা আবার অন্তঃসত্ত্বা হন। এরপর অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মা-বোনের সঙ্গে থাকার অজুহাতে জুন মাসে ফারহানা বাংলাদেশে চলে আসেন। দেশে আসার পর তিনি গ্যারিসনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সন্তানদের কথা চিন্তা করে গ্যারিসন ফারহানাকে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। কিন্তু পরে দেখলেন, অনেকদিন হয়ে গেলেও ফারহানা আর কোনো যোগাযোগ করছে না।
গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে গ্যারিসন ফারহানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে অক্টোবর মাসে তিনি বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশে আসার পর গ্যারিসন যোগাযোগ করে দেখা করতে চাইলেও ফারহানা দেখা করেননি। বাচ্চাদের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
একপর্যায়ে উত্তরা থানার পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে ফারহানার বাসায় যান গ্যারিসন। বাসায় গিয়ে জানতে পারেন, ফারহানা কানাডার এক ব্যক্তির সঙ্গে বসবাস করছেন। তাকে বিয়েও করেছেন বলে দাবি করেন ফারহানা। এদিকে, এক মাস আগে আরেকটি পুত্র সন্তান জন্ম দিয়েছেন ফারহানা।
আইনজীবী জানান, ফারহানা গ্যারিসনকে হাসপাতালের কাগজ দেখিয়ে বলেছেন, দ্বিতীয় সন্তান গ্যারিসনের না। এ সন্তান কানাডার ওই নাগরিকের। এ সময় একটি ম্যারেজ ডকুমেন্ট দেখান ফারহানা। অথচ গ্যারিসনের সঙ্গে তাঁর এখনও ডিভোর্স হয়নি।
‘পুরান ঢাকার একজন কাজী যুক্তরাষ্ট্রে একটি তালাকের নোটিশ পাঠায়। সেটি পেয়ে গ্যারিসনের বাংলাদেশে আসেন’ উল্লেখ করে গ্যারিসনের আইনজীবী ব্যারিস্টার সজীব মাহমুদ বলেন, ‘নোটিশটি ইনভ্যালিড বলে আমরা আদালতকে জানিয়েছি। কারণ, তাদের বিয়ে হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট অব মিজোরির আইন অনুযায়ী। ডিভোর্স হলে স্টেট আইনে হতে হবে।’