গাড়ি থামিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়, গ্রেপ্তার ৫১
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গভীর রাত হলেই সড়কে নামতেন তারা। এরপর হাতে লেজার লাইট নিয়ে চলন্ত গাড়ির চালককে থামানোর সংকেত দিতেন। চালক গাড়ি থামালে তারা নানা অজুহাতে চাঁদা চাইতেন। চাঁদা না দিলে সড়কেই প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিতেন।
এভাবে তারা প্রতি গাড়ি থেকে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তুলতেন। তাদের নিয়োগ দিতেন বিভিন্ন ব্যক্তি। যারা নিজেদের ইজারাদার দাবি করতেন। ঢাকার বিভিন্ন সড়কে চাঁদাবাজির অভিযোগে হাতেনাতে ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন—জাবেদ (৩৬), আরিফ (৩৩), আবুল হোসেন (২৭), বিল্লাল হোসেন (১৯), আলী হোসেন (৩১), রাকিব হাসান (২৮), ফালান মিয়া (৩৫), সাকিব আলী (২২), বাবলু (৪৫), রাজা (৪০), মাসুদ (৪০), ইমন হোসেন (১৮), কাওসার (১৭), জাহিদ হাসান (২৪), সুমন (৪০), আক্তার হোসেন (৪৬), সেলিম হোসেন (৪২), শহিদ (৩৯), মানিক (৩৭), আবুল কাশেম (৪০), তামজিদ হোসেন (৩০), জহির হোসেন (৪৫), শফিক (৩৬), সাদ্দাম হোসেন(৩০), সোহেল (৩৮), নাদিম খান বাদল (৩৫), ফারদিন (২১), বিল্লাল (২৬), শামসুল (৫০), আরিব হোসেন (২৫), সেলিম (৩২), জসিম (২৪), মাহবুব (১৮), মোহসিন (৪২), ফারুক (৪০), বিপ্লব (৩৫), রাজিব (২৬), জমির (৫০), অজল হক (৩৮), আতিউর রহমান (১৮), অলি (৪৫), সালাউদ্দিন (৪৫), ইউনুস (৪০), কবির (৩০), সাদ্দাম হোসেন (৩০), শহিদুল ইসলাম (২৭), সজিব শেখ (১৮), আব্দুর রহমান (২৩), মাসুদ (৩১) ও মোহাম্মদ এনতা।
এ সময় তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের নগদ এক লাখ ১২ হাজার ৩০৬ টাকা, একটি লেজার রশ্মির লাইট, ছয়টি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জ্যাকেট, দুটি অন্যান্য লাইট, চারটি আইডি কার্ড, ৪১টি মোবাইল এবং বিপুল পরিমাণ চাঁদা আদায়ের রশিদ উদ্ধার করা হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি করতেন। কথিত ইজারাদারদের নির্দেশে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতি রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় অবস্থান নিতেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্যবাহী যানবাহন রাজধানীতে প্রবেশের সময় তারা লেজার লাইট, লাঠি ও বিভিন্ন সংকেতের মাধ্যমে গাড়ি থামানো হতো। এরপর চালকের কাছে অবৈধভাবে চাঁদা দাবি করা হতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা চাঁদা আদায়ের রশিদও দিতেন। চালকরা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের গাড়ি ভাঙচুর, ড্রাইভার-হেলপারকে মারধরসহ প্রাণনাশের হুমকি দিতো চক্রটি।
খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা প্রতিটি ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। পণ্যবাহী কোনো গাড়ি দেখলেই তারা লেজার লাইটের আলো নিক্ষেপ করে তা থামিয়ে কৌশলে বিভিন্ন অজুহাতে চাঁদা আদায় করতেন। বিশেষ করে মধ্য রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যখন পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকা প্রবেশ করে ওই সময় সড়কে এমন কাণ্ডকলাপ শুরু করতেন তারা।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা প্রতি রাতে চাঁদা আদায় করে ইজারাদারদের দিতেন বলে দাবি করেছেন। চাঁদা আদায়ের জন্য ইজারাদাররা গ্রেপ্তার প্রত্যেককে প্রতি রাতে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি দিতেন। এভাবে তারা প্রতি রাতে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র্যাব।