সরকার নির্ধারিত মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় খুন হন মামুন
সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করায় রাজশাহীর বাঘা এলাকার মাংস ব্যবসায়ী মামুন হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যায় জড়িত আরেক মাংস ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) মাদারীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফা লাভের আশায় অন্যায়ভাবে গরুর মাংসের মূল্যবৃদ্ধি করে মাংসের বাজারে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এতে করে সীমিত ও নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস তাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। গত বছর নভেম্বর মাস হতে রাজধানীর শাজাহানপুরের একজন মাংস ব্যবসায়ী ৫৯৫ টাকায় প্রতি কেজি মাংস বিক্রি শুরু করে। যা সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে। পরবর্তীতে ঐ মাংস ব্যবসায়ীর দেখাদেখি আরো কিছু মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি করে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সময় যেসব মাংস ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করতে থাকলে মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি না করলে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করতে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর শাহাজানপুরে কম দামে মাংস বিক্রি করায় আলোচিত মাংস ব্যবসায়ী খলিলকে হত্যার হুমকি প্রদানকারীকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছে র্যাব।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২০ জানুয়ারি সকালে রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানী হাটে ন্যায্য মূল্যে গরুর মাংস বিক্রি করায় একজন মাংস ব্যবসায়ীকে দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে আরেকজন মাংস ব্যবসায়ী। পরে স্থানীয় জনগণ তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছোটভাই বাদী হয়ে রাজশাহীর বাঘা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব-৫ ও র্যাব-৮ এর আভিযানিক দল মাদারীপুরের শিবচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মাংস ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি মো. মিজানুর রহমান খোকনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খোকন ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মামুন গ্রেপ্তার খোকনের নিকট আত্মীয়। তারা রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানি বাজারে একত্রে গরুর মাংস বিক্রির ব্যবসা করতেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তা অধিদপ্তর, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্মিলিত বৈঠক করে ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ভোক্তা অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে তাদের দুজনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে গত বছরের শেষের দিকে ভুক্তভোগী মামুন ভোক্তা অধিদপ্তরের নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আলাদাভাবে মাংস বিক্রির ব্যবসা শুরু করে। তখন মামুনের দোকানে মাংস বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং গ্রেপ্তার খোকনের দোকানে মাংস বিক্রির পরিমাণ কমে যায়। নির্ধারিত মূল্যে মাংস বিক্রি করা নিয়ে ঘটনার দিন তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডের সৃষ্টি হলে খোকন উত্তেজিত হয়ে মাংস কাটার ছুরি দিয়ে মামুনকে প্রকাশ্যে পেটে ও বুকের ডান পাশে উপর্যুপরি আঘাত করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার খোকন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেপ্তার এড়াতে প্রথমে রাজশাহীর তাহিরপুরে তার এক আত্মীয় বাড়িতে অবস্থান করেন। পরবর্তীতে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় স্থায়ীভাবে আত্মগোপনের লক্ষ্যে তার পূর্ব পরিচিত এক বন্ধুর মাধ্যমে সেখানে ড্রেজার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে থাকেন। মাদারীপুরের শিবচর এালাকায় আত্মগোপনে থাকাকালীন তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।