শিশু মেয়েকে হারপিক পান করিয়ে মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা
অভাবের তাড়নায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নয় মাসের শিশু মেয়ে আফিয়াকে টয়লেট ক্লিনার (হারপিক) পান করিয়ে মা আঁখি বেগম (২০) আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গতকাল শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আঁখি বেগম উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের গাছকাটা শ্রমিক মামুন তালুকদারের স্ত্রী। এ ঘটনায় শিশু আফিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আঁখিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার এক দিন আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি কোনো কাজকর্ম না করায় এবং অভাব-অনটনের কারণে আঁখি বেগমের স্বামী মামুনকে তাঁর বাবা আলমগীর তালুকদার সংসার থেকে পৃথক করে দেন। এসব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মামুনের সঙ্গে স্ত্রী আঁখি বেগমের ঝগড়াঝাটি আরও বেড়ে যায়। এর জেরেই আঁখি বেগম এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার আমিনুর রহমান জানিয়েছেন।
মামুন তালুকদারের স্ত্রী আঁখি বেগম নয় মাসের মেয়ে আফিয়াকে প্রথম হারপিক পান করান। পরে নিজেও হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বিষয়টি স্থানীয়রা জানার পর তাদের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আর অসুস্থ মাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। শিশুটির মরদেহ গোপালগঞ্জ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ওসি খন্দকার আমিনুর রহমান বলেন, পরিবারটি অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছিল। অভাব অনটনের বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। গত বৃহস্পতিবার মামুনের মা-বাবা অতিষ্ঠ হয়ে তাদের (মামুন-আঁখি) পৃথক করে দেন। এ কারণে ক্ষোভে, দুঃখে ও অভিমান করে মামুন তালুকদারের স্ত্রী আঁখি বেগম এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেননি। তবে ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কেউ অভিযোগ করলে অথবা তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন বলেন, হাসাপাতালে আনার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়। মায়ের অবস্থাও ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শনিবার রাতেই গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতী গ্রামের নূর আলম শেখের মেয়ে আঁখি বেগমের সঙ্গে একই উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মামুন তালুকদারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে মামুন তেমন কোনো কাজ করতেন না। মাঝেমধ্যে গাছকাটা শ্রমিকের কাজ করলেও বেশিরভাগ সময় বেকার থাকেন। তাই সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ ও মনোমালিন্য চলে আসছিল। দরিদ্রতার মধ্যেই নয় মাস আগে এ দম্পত্তির একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। তার পরও মামুন অভাব অনটন দূর করতে কোনো আয়-রোজগারের ব্যবস্থা করেননি। বসে না থেকে আয় রোজগার বৃদ্ধির কথা বললেই তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ায় লিপ্ত হতেন। এতে স্ত্রী আঁখির জীবন অতীষ্ট হয়ে ওঠে। এই হতাশা থেকে তিনি তাঁর শিশু মেয়েকে প্রথমে হারপিক পান করান। পরে নিজেও হারপিক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।