একজনের বদলে জেলে অন্যজন, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের
মাদক মামলায় যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসানের পরিবর্তে মিরাজুল ইসলামের সাজা খাটার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও)।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি আতাউর রহমানের একক বেঞ্চ হাইকোর্ট এ আদেশ দেন। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের বলেন, আসামি টাকা দিয়ে অন্যকে দিয়ে জেল খাটায় এবং আইনি সব প্রক্রিয়ায় তাকে দিয়ে ফেস করায়, যাতে তার কোনো সমস্যা না হয়। এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে নাজমুল নামের এক আসমির ক্ষেত্রে। তার সাত বছর সাজা হওয়ার পর সে মিরাজুলের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে চুক্তি করে তাকে সেখানে আত্মসমর্থন করান। এরপর সে জামিন নেন, জামিন শুনানি আপিলে আসে। আজ রায় ছিল। ঘটনাটি আদালতের নজরে এনেছি।
এ ধরনের ঘটনা কীভাবে রোধ করা যায়—এমন প্রশ্নের জবাবে মনজিল মোরশেদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে। আদালত যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। তবে, এটি চূড়ান্তভাবে যদি বন্ধ করতে হয় সেক্ষেত্রে আমি বলব, এটার একমাত্র উপায় হলো প্রত্যেক জেলখানা ডিজিটালাইজড করা। প্রত্যেক আসামি ঢোকার সময় ফিঙ্গার দিয়ে ঢুকবে যাতে তার এনআইডির সঙ্গে তথ্য যাচাই করা যায়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২০ সালের আগস্ট মাসে উত্তরায় একটি বাসায় অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল, গাঁজাসহ আটক করা হয় আনোয়ার হোসেন নামে একজনকে। তবে, পালিয়ে যেতে সক্ষম হন মাদকচক্রের মূল হোতা। মাদক উদ্ধারের এ ঘটনায় দুজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। বিচারে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় পলাতক ওই ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এ পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল ঘটনা। এরপর যা ঘটেছে, তা যেন আলোচিত ‘আয়নাবাজি’ সিনেমার কাহিনির বাস্তব রূপ।
সাজাপ্রাপ্ত ওই আসামি মাদক কারবারের মূল হোতা মো. নাজমুল হাসান। ঢাকার উত্তরার ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের এই নেতার পরিচয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করে যিনি জেল খেটেছেন, তার প্রকৃত নাম মিরাজুল ইসলাম। টাকার বিনিময়ে রীতিমতো চুক্তি করে নাজমুলের সাজা নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন তিনি। যদিও চুক্তিমতো সব টাকা পাননি মিরাজুল। জামিনে বেরিয়ে এসে টাকা চাইতে গেলে উল্টো ৫০ পিস ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
মাদক মামলার নথি পর্যালোচনা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালের আগস্টে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালায় রাজধানীর উত্তরায়। প্রাইভেটকারে পাচারের সময় মাদক ব্যবসায়ী আনোয়ারকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানকারী দল উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ২৫ নম্বর রোডের ১/২ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ফেনডিসিল ও গাঁজা উদ্ধার করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান আরেক মাদক ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান। এই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা দায়ের করা হয়, যার নম্বর ০৪ (০৮), ২০২০। এই মামলার (মেট্রো দায়রা মামলা নম্বর ৭৪৬১/২০২১) অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুই আসামিকে সাত বছরের জেল দেন অষ্টম দায়রা জজ আদালত।
আনোয়ার শুরু থেকেই জেলে থাকলেও নাজমুলকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। যদিও স্থানীয়রা বলছেন, ওই সময় নাজমুল নিজ বাসায় থাকলেও পুলিশ তাকে ধরেনি। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এই মাদক কারবারি ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।