নাসির, অন্তরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে—এক জীবনে আর কত কষ্ট বাকি তোমার?
রাজধানীর বেইলি রোডের সাত তলা একটি ভবনের অগ্নিকাণ্ডে শ্বাসনালি পুড়ে মারা গেছেন লামিশা। তার মৃত্যুশোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম নাসির। ছয় বছর আগে স্ত্রীকে হারানোর সেই অন্ধকারতম দিন নাসিরুল ইসলামের জীবনে আবারও নেমে এলো।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি নাসিরুল ইসলাম নাসিরের মেয়ের মৃত্যতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি রুহুল আমিন শিপার। সেখানে তিনি লিখেন, ওকে ফোন দিতে মন চাইছে না। তাই হোয়াটসঅ্যাপে শুধু এই মেসেজটা দিয়েছি, ‘নাসির, আমার অন্তরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে।’
রুহুল আমিন শিপার লিখেছেন, ‘প্রায় ছয় বছর আগের কথা। নাসির পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে বিএসএমএমইউ (পিজি) হাসপাতালের ডি ব্লকের সামনে। সেখানে একটি ফ্রিজার ভ্যানে তার স্ত্রীর মরদেহ রাখা। নাসিরের জিম্মায় ছোট্ট দুইটি মেয়েকে রেখে ভাবি একা চলে গেলেন।’
এক ঘটনা উল্লেখ করে ডিআইজি লেখেন, কয়েক বছর আগের কথা। তখন বেনজির আহমেদ স্যার র্যাবের মহাপরিচালক। পুলিশ সদরদপ্তরে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নাসিরের একটা প্রেজেন্টেশন দেখে প্রকাশ্যে বলে ফেললেন, ‘ইউ আর সো ইন্টেলিজেন্ট। কিন্তু আমি তোমাকে চিনি না কেন?’ এরপর বেনজির স্যার আইজিপি হয়ে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কারে হাত দিলেন। এআইজি রিক্রুটমেন্ট হিসেবে মেধাবী নাসির একটি অসাধারণ নিয়োগ কাঠামো তৈরি করে দিলেন। যেখানে চাইলেও দুর্নীতি কিংবা পক্ষপাতিত্ব করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে সেই কাঠামোতেই নিয়োগ চলছে।
ডিআইজি তার স্ট্যাটাসে আরও লিখেছেন, দুই মেয়ে নিয়ে নাসিরের একার সংসার। একদিন শুধু বলেছিলাম, ‘আর বিয়েশাদি করলে না?’ একটু হেসে মাথা নেড়ে ও বললো, ‘না, স্যার।’ ওর মেয়েরা খুবই মেধাবী। বড় মেয়ে সম্ভবত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ফার্স্ট গার্ল ছিল। কলেজ শেষ করে সে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল।
নাসিরের জীবনে ছয় বছর আগের সেই রাত আবার ফিরে এলো। গতরাতে আগুন লাগার সময় বেইলি রোডের সেই রেস্তোরাঁয় ওর বুয়েট পড়ুয়া মেয়েটা ছিল। সে আর ফেরেনি, চলে গেছে জীবনের ওপারে। বছর ছয়েক আগে বউ মরে যাওয়ার রাতে নাসিরের সেই চেহারার কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার। এবার অবশ্য ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। মেয়ের মরদেহ নিয়ে ফরিদপুরের পথে আছে সে।
ওকে ফোন দিতে মন চাইছে না। তাই হোয়াটসঅ্যাপে শুধু এই মেসেজটা দিয়েছি, ‘নাসির, আমার অন্তরটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। বাসায় বসে এখন কাঁদছি। এক জীবনে আর কত কষ্ট বাকি তোমার?’