গণঅভ্যুত্থানে মিছিলের অগ্রভাগে থাকা হোসেন আলীকে সম্মাননা
বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব আন্দোলনগুলোর মধ্যে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ছিল অন্যতম। এই গণঅভ্যুত্থানের সময় মিছিলের অগ্রভাগে রয়েছে একজন পথশিশু, এই ছবিটি দেখেননি এমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা সেই পথশিশুটি হোসেন আলী। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে এমনই দাবি করেছেন হোসেন আলী নামে এক ব্যক্তি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের অগ্রভাগে থাকা ওই পথশিশু হিসেবে দাবি করা হোসেন আলীকে শরীয়তপুরে সম্মাননা জানিয়েছে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও মৃত্তিকা নামে দুটি সংগঠন।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) বিকেলে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের হল রুমে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সম্মাননা অনুষ্ঠানে হোসেন আলীর সঙ্গে ভাষা সৈনিক ডা. গোলাম মাওলার ছেলে ডা. গোলাম ফারুককেও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলের অগ্রভাগে থাকা পথশিশু হোসেন আলীর সংগ্রামের প্রতি সম্মান জানাতে ও ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলার ছেলে গোলাম ফারুককে সম্মান জানাতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও সামাজিক সংগঠন মৃত্তিকার উদ্যোগে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। হোসেন আলী বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দারোয়ান হিসেবে কর্মরত। তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পালোয়ান বলে সম্বোধন করে ২০ টাকা দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সংগ্রামের ইতিহাসে যখন গণঅভ্যুত্থানের ওই ছবি ব্যবহার করা হয় তখন হোসেন আলী বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই পালোয়ান ডাক নামসহ তার নামের স্বীকৃতি চান। হোসেন আলীর সংগ্রাম ও গোলাম ফারুকের মানবিকতার প্রতি সম্মান জানিয়ে অনুষ্ঠানে তাদেরকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এসময় হোসেন আলীকে নগদ ২০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।
হোসেন আলী তার বক্তব্যে বলেন, “আমি ফুটপাতে ছিলাম। ১৯৬৯ সালে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের সামনে দিয়ে একটি মিছিল যাচ্ছিল, সেই মিছিলের স্লোগান ছিল ‘জেলের তালা ভাঙব, মুজিব ভাইকে আনব। মুজিব ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’। আমার পরণে তখন গেঞ্জি ও ইংলিশ প্যান্ট ছিল। তখন আমি ওই মিছিলের পিছে পিছে দৌড়ে গিয়েছি। মিছিলটি শাহবাগের দিকে যাত্রা করলে আমি গরমে গেঞ্জি খুলে মাজায় বেধেছিলাম। মিছিলের আগে যাওয়া নিয়ে একজন আমাকে বলেছিল, তুমি যে আগে যাও, যদি গুলি লেগে মরে যাও। আমি বলেছিলাম, মরলে আমার কান্দনের কেউ নাই। তোফালেল আহমেদ, আমির হোসেন আমু ভাই সেদিন বলেছিল, পালোয়ান তুই পেছনে যা। তখন আমি বলেছিলাম, না ভাই মরলে আমি আগে মরুম, তারপর আপনারা মরবেন। এরপর মিছিলে গুলির প্রস্তুতিকালে আমি হাইকোর্ট দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম। স্বাধীনতার পর আমি অনেকের কাছে আকুতি-মিনতি করে আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি। আপনারা আমাকে যে সম্মান জানিয়েছেন, তার আমার জীবনে প্রথম সম্মান। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
নড়িয়া পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর শিকদার, বিশেষ অতিথি হিসেবে খাদ্য অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক চিত্তরঞ্জন বেপারীসহ অন্যান্যরা।