‘এটি আমার শেষ কথা আর হয়ত কথা বলতে পারব না’
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিকদের পরিবারে বিরাজ করছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। এমভি আব্দুল্লাহ নামের জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকের মধ্যে রয়েছেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চর নুরনগর গ্রামের হক মো. নাজমুল। তিনি জাহাজের অর্ডিনারি সি-ম্যান (সাধারণ নাবিক) হিসেবে কর্মরত আছেন। যেটি এখন সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাতে তার মায়ের সঙ্গে মোবাইলফোনে সর্বশেষ কথা হয় নাজমুলের। এর পর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নাজমুল।
মোবাইলফোনে নাজমুলের মা নারগিস বেগম বলেন, নাজমুল রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমরা আটকা পড়েছি। আর কথাবার্তা বলতে পারব না। আমাদের যা কিছু ছিল সব কিছু নিয়ে নিয়েছে। এটি আমার শেষ কথা। আর হয়তো কথা বলতে পারব না। মা তুমি দোয়া কইরো। আমাদের আটকে ফেলেছে। নামাজ পড়ে আমাদের জন্য দোয়া করো।
আজ বুধবার দুপুরে চর নুরনগন গ্রামের হক মো. নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নাজমুলের জিম্মি হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছে কামারখন্দ উপজেলাসহ পুরো সিরাজগঞ্জ শহরে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসছে নাজমুলের বাড়িতে। অসুস্থ কৃষক বাবা সন্তানের জন্য হাউমাউ করে কাঁদছেন। ছেলের ছবি নিয়ে বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন মা নারগিস বেগম।
নাজমুল বাদুল্লাহপুর এমএস অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি ও ২০১৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর সিরাজগঞ্জ ইসলামিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পরেই চাকরি পেয়ে চলে যান। দুই ভাই-বোনের মধ্যে নাজমুল বড়। মাত্র ২০ বছর বয়সেই জাহাজে ক্রু হিসেবে চাকরি পাওয়ার সুবাদে পরিবারের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কিন্তু জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন নাজমুলের বাবা-মা। সন্তান জিম্মি হওয়ার খবরে ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বারবার ছেলেকে ফিরিয়ে আনার আকুতি তাদের। কী হবে নাজমুলের, কবে ফিরবে নাজমুল? এমন আতঙ্ক ও দুঃখ ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিবেশীসহ এলাকাবাসীর মধ্যেও।
নাজমুলের চাচা ফজলুল হক বলেন, নাজমুলের বাবা আবু সামা শেখ কৃষিকাজ করে সংসার চালাতেন। এখন তিনি অসুস্থ। নাজমুল চাকরি পাওয়ার পর থেকে কৃষি কাজ ছেড়ে দিয়েছেন তার বাবা। চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছেন নাজমুল। বাড়িতে এখন তার বাবা-মা থাকেন। নাজমুলের বোনের বিয়ের সময় চার লাখ টাকা ঋণ করেছেন। একমাত্র উপার্জনক্ষম নাজমুলের কিছু হলে, পরিবারটির চলার কোনো উপায় থাকবে না। ঋণ পরিশোধ হবে কীভাবে।
নাজমুলের বাবা আবু সামা শেখ বলেন, নাজমুলের অর্থে আমাদের সংসার চলে। নাজমুল ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। নাজমুলের কিছু হলে পথে বসতে হবে। যেভাবে হোক আমার ছেলেকে ফেরত চাই। শুধু আমার ছেলে নয়, জিম্মি হওয়া সকলকে যেনে ফিরিয়ে আনা হয়, এটি সরকারের কাছে আমার দাবি।
নাজমুলের মা নারগিস বেগম বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। ছেলে কোথায় গেল। আমার ছেলেকে এনে দেন। বুকের মধ্যে আগুন জ্বলছে। কোনো মতে সহ্য করে আছি। গতকাল ইফতারের পর নাজমুল ফোন দিয়ে বলে মা আমরা আটকা পড়েছি। আর কথাবার্তা বলতে পারব না। আমাদের যা কিছু ছিল সব কিছু নিয়ে নিয়েছে। এটি আমার শেষ কথা আর হয়তো কথা বলতে পারব না। মা তুমি দোয়া কইরো। আমাদের আটকে ফেলেছে। নামাজ পড়ে আমাদের জন্য দোয়া করো।