এক পা নিয়ে জন্ম, নেই মলদ্বার ও প্রসাবের রাস্তাও
একটি মাত্র পা। নেই মলদ্বার ও প্রসাবের রাস্তাও। এমনই এক শিশু জন্ম নিয়েছে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার শালখুড়িয়া গ্রামে। এই শিশুকে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য আজ বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল বুধবার বিকেলে বিরামপুর সিটি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জমজ দুটি সন্তানের জন্ম দেন জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার শালখুড়িয়া গ্রামের হত-দরিদ্র ভ্যানচালক মাহফুজুল ইসলামের স্ত্রী তাসলিমা বেগম। একসঙ্গে জমজ দুটি সন্তানের মধ্যে একটি স্বাভাবিক মেয়ে সন্তানের জন্ম হলেও অপর শিশুটির মলদ্বার ও প্রসাবের রাস্তা নেই। একইসঙ্গে এক পা নিয়ে জন্মায় অদ্ভুত এই শিশুটি। মলদ্বার ও প্রসাবের রাস্তা না থাকায় শিশুটিকে কোনো কিছু খাওয়ানো যাচ্ছে না। ফলে স্থানীয় চিকিৎসকরা শিশুটির চিকিৎসার জন্য ওই দিন রাত সাড়ে ১১টায় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।
শিশুর নানি মোছা. আক্তারা বেগম জানান, হতকাল বিকেলে বিরামপুরের একটি ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে এক মেয়ে শিশু সুস্থ আছে। অপর শিশুটি একটি পা নিয়ে জন্ম নেয়। পাশাপাশি তার মলদ্বার ও প্রসাবের রাস্তা নেই। এই অবস্থায় শিশুটিকে রাতে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি।
শিশুটির বাবা ভ্যানচালক মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘বিরামপুরের একটি ক্লিনিকে আমার স্ত্রীর জমজ দুটি সন্তানের জন্ম হয়। এর মধ্যে একটি শিশু একটি পা নিয়ে জন্ম নেয়। পাশাপাশি তার মলদ্বার ও প্রসাবের রাস্তা নেই। আমার শিশু সন্তানের সুস্থতার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমি গরিব মানুষ, চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ নাই। তাই সরকারের কাছে তার সুচিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছি।’
সিজারিয়ান অপারেশন করা বিরামপুরের গাইনি চিকিৎসক তাহেরা বেগম বলেন, ‘জেনেটিক্যাল সমস্যার কারণে জন্মগতভাবে শিশুটির ত্রুটি দেখা দিয়েছে। অপারেশনের মাধ্যমে তার প্রস্রাব ও পায়ুপথ বের করা না গেলে শিশুটির বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। তবে শিশুটির শরীরের অন্য অঙ্গগুলো যেমন মুখ, নাক, কান ও হাত স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা শিশুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছি।’
আজ বিকালে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. ফাতেমা ফারজানা বলেন, গতকাল বুধবার রাতে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু তার মলদ্বার ও প্রস্রাবের রাস্তা নেই এবং একটি মাত্র পা। শিশুটির বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। শিশুটির পেট ফুলা ছিল এবং শ্বসকষ্ট হচ্ছিল। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আরও পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা যায় শিশুটি জন্মগত ভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাকে শিরাপথে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এই অবস্থায় অবিলম্বে তার মলদ্বার ও প্রস্রাবের জন্য একটা রাস্তা তৈরি করতে হবে। এই ধরনের জটিল রোগীর সাধানত দিনাজপুরে চিকিৎসা করা কঠিন। এজন্য আমরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছি।’
এদিকে শিশুটির চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবাশীষ চৌধুরী ও জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে শিশুটির চিকিৎসার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতারও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, শিশুটির জন্মের পর থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। শিশুর পরিবারকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে শিশুর সব বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।