কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসাবে এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
মুসল্লিদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আগামী বৃহস্পতিবারকে (১১ এপ্রিল) ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ধরে নিয়ে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, ঈদগাহ কমিটির কর্মকর্তাদের তৎপড়তা ও দিন-রাতের পরিশ্রমে নামাজের উপযোগী হয়ে উঠছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদের জামাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। মাঠে একসঙ্গে তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করে থাকেন। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
এরই মধ্যে মাঠে দাগ কাটা, বালু ফেলা, দেয়ালে রং করাসহ শোলাকিয়া ময়দানকে জামাতের উপযোগী করার কাজ শেষ হয়েছে। সংস্কার করা হয়েছে ওজুখানা এবং টয়লেট। চলছে শোভাবর্ধনের কাজও। তা ছাড়া মুসল্লিদের জন্য সুপেয় পানি, মেডিক্যাল টিম, দূর-দূরান্তের মুসল্লিদের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে ইতোমধ্যে। প্রস্তুত রাখা হেয়েছে বহুসংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও কয়েকটি মেডিক্যাল টিম।
দূর-দূরান্তের মুসুল্লিদের যাতায়াতের জন্য ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেন দুটি ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে মুসুল্লি নিয়ে এসে নামাজের শেষে পুনরায় ফিরে যাবে। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বারবার পরিদর্শন করছেন ঈদগাহ মাঠ।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জামাতের মুসুল্লিদের জন্য দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবার চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যেন মুসুল্লিরা নিরাপদে জামাতে এসে নির্বিঘ্নে ফিরে যেতে পারেন। জামাতে শুধু টুপি, মাস্ক ও জায়নামাজ ছাড়া কিছুই বহন করা যাবে না। মোবাইল ফোন ও ছাতাও বাড়িতে রেখে আসতে হবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের নামাজ চলাকালীন শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে জঙ্গিদের অতর্কিত হামলায় নিহত দুই পুলিশ সদস্য ও চার পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনা মাথায় রেখে এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে দেড়গুণ বেশি নিরাপত্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হবে পুরো মাঠ ও আশপাশ। নামাজের সময় পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
এ ছাড়া মাঠসহ প্রবেশ পথগুলোতে থাকছে সিসি ক্যামেরা ও ঈদগাহ পর্যবেক্ষণের জন্য ছয়টি ওয়াচ টাওয়ার। আর আকাশে উড়বে পুলিশের চারটি ড্রোন ক্যামেরা। থাকবে ছয়টি ভিডিও ক্যামেরা। এর ফলে নিরাপদে, নির্বিঘ্নে ও নিশ্চিন্তে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারবেন।
র্যাব ১৪-এর অধিনায়ক মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, মাঠে শতাধিক র্যাব সদস্য কয়েক স্তরের দায়িত্ব পালন করবেন। পুরো মাঠ নিরাপত্তা চাদরে ঢাকা থাকবে। মাঠে নজরদারি রাখতে কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রবীণ সাংবাদিক ও জেলা পালিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ জানান, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জের জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জমির উপর এ ঈদগাহ মাঠ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছর শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে নাম ধারণ করেছে আজকের শোলাকিয়া মাঠ। মাঠে একসঙ্গে দুই লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। প্রায় সাত একর আয়তনের মাঠটিতে ২৬৫টি কাতার রয়েছে।